৪৪ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্র থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবসহ নানা সংকটে ভুগছে মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। ফলে হাসপাতালটিতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৪৪ কোটি টাকা মূল্যের দুটি ক্যাথল্যাব, এমআরআই মেশিন, এক্সরে মেশিন ও মেমোগ্রাম। সেবা না পেয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রেড হাউসের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ১৯ কোটি টাকার দুইটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু ক্যাথল্যাবের ওয়াশরুম ও প্রশিক্ষিত লোকবল না থাকায় তা এখনো চালু করা যায়নি। এছাড়া কারিগরি ত্রুটির কারণে তিন বছরেও চালু করা যায়নি ১৮ কোটি টাকার এমআরআই মেশিন। হাসপাতালের ৬ কোটি টাকার তিনটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে একটি এক্সরে মেশিন কারিগরি ত্রুটির কারণে পড়ে আছে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এক কোটি টাকার মেমোগ্রাম মেশিনও বিকল অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালের হৃদরোগ ইউনিটের ৮০ শয্যার মধ্যে ৪০ শয্যার সিসিইউ চালু থাকলেও তা সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। সেখানে দৈনিক ৮০-৯০ জনের এনজিওগ্রাম করার প্রয়োজন হয়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ শয্যার (আইসিইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও তা বন্ধ রয়েছে। সেখানে দুটি ক্যাথল্যাব, এমআরআই মেশিন, এক্সরে মেশিন ও মেমোগ্রাম অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে ঢাকাসহ অন্যত্র। অনেকের এ সাধ্য না থাকায় তাদের চিকিৎসা সেবা অধরাই থেকে যাচ্ছে।
গোয়ালডাঙ্গি গ্রামের উজ্জ্বল জানান, আমি মাইল্ড স্ট্রোক করে কর্নেল মালেক হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে ডাক্তার আমাকে এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই হাসপাতালে সেই পরীক্ষা করা যাবে না। শুনলাম এখানে এনজিওগ্রাম পরীক্ষার মেশিন আছে কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে ও কারিগরি ত্রুটির কারণে তা এখনো চালু হয়নি। বাধ্য হয়েই এখন আমাকে ঢাকা যেতে হবে। আমি ছোট একটা চাকরি করি। কত টাকা লাগবে, কী করব বুঝতে পারছি না।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার খালেদ হোসেন জানান, আমার দাদিকে এই হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তাকে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি বলেন, এই হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার মেশিন থাকলেও চিকিৎসা সেবা মিলছে না। এগুলো চালু করা গেলে আমাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যেতে হতো না। একই সঙ্গে অর্থও সাশ্রয় হতো।
টাঙ্গাইলের ইমরান আলী জানান, আমি ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা নিয়ে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমাকে রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই করার জন্য বলেন। কিন্তু এই হাসপাতালে সেই পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। পরে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে পরীক্ষা করেছি। ঢাকার মতো মেডিকেল হাসপাতাল করার পরও যদি সেই সেবা পাওয়া না যায়। তাহলে ভোগান্তি ও অর্থের অপচয় রোধ করা যাবে না। হাসপাতালটিতে সকল ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, হাসপাতালে যে-সব রোগী হার্ট অ্যাটাকের কারণে ভর্তি হয় তাদের হার্টের ব্লক ছোটানোর জন্য বা রিং পরানোর জন্য মূলত এই ক্যাথল্যাবের প্রয়োজন হয়। সেখানে ক্যাথল্যাব দুটি চালু হলে এই হাসপাতালে মাসে ১০-১২ জন রোগীকে এনজিওগ্রাম, হার্টের রিং বা পেস মেকারের মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া যেত।
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, হাসপাতাল শুরু হওয়ার পর থেকে এমআরআই মেশিনটি চালু করা যায়নি। তবে সিটিস্ক্যান দিয়ে স্ট্রোক করা রোগীকে ও অন্যান্য রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু কাজ যদি এমআরআই মেশিনের মাধ্যমে করা যেত তাহলে ভালো হত। আর এই হাসপাতালে তিনটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে দুইটি সচল থাকলেও একটি মেশিনের সেন্সরে সমস্যা থাকায় সচল করা যায়নি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকেই ক্যাথল্যাব, এমআরআই, এক্সরে ও মেমোগ্রাম মেশিন চালুর জন্য কাজ শুরু করেছি। এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক মিটিং সম্পন্ন করেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সম্প্রতি তিনজন নার্স ও দুজন টেকনিশিয়ানকে ঢাকায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে ক্যাথল্যাব ও অন্যান্য চিকিৎসাযন্ত্র সচল হবে। এর মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে।
(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন