পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে মৌলভীবাজারে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত ভারী বর্ষণে মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার অন্তত ১৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, জুড়ী, সোনাই ও ফানাইসহ সবকটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীতে পানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় হাকালুকি হাওরের পানি নিষ্কাশনের পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এশিয়ার বৃহত্তর এই হাওর ফুলেফেঁপে অনেকটা সাগরে রূপ নিয়েছে। হাওরের পানি ভাটিতে যেতে না পাড়ায় সমতলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, জুড়ী ও সদর উপজেলায় প্লাবিত এলাকার সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোকজনের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য মতে, বুধবার সকাল ৯টায় মনু নদীর পানি মউল শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি জেলার শেরপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর পানি কমলগঞ্জ রেলব্রিজ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, জুড়ী নদীর পানি জুড়ীতে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভারী বর্ষণে জেলার সবকটি পাহাড়ি ছড়া ও ছোট নদ-নদীর পানিও ফুলেফেঁপে সমতলে গড়িয়ে পড়ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কুলাউড়া উপজেলা। এখানে কুলাউড়া পৌরসভাসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অর্ধলক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় বুধবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) সুজিত কুমার চন্দকে।
তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় ৩০-৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১৯২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আজ আরও লোক আশ্রয় নেওয়ার অপেক্ষায় আছে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মনু, ধলাই, কুশিয়ারাসহ নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারী বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে বড়লেখা উপজেলার ৪টি, জুড়ি উপজেলার ৩টি, কুলাউড়া উপজেলার ৩টি, সদর উপজেলার ৪টি এবং রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন। ক্রমবর্ধমান পানি বৃদ্ধির ফলে উল্লিখিত উপজেলাসমূহে সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জুড়ি, বড়লেখা এবং কুলাউড়া উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ভুক্তভোগী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম সকল ইউএনওকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ খাবার ও পানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
(ঢাকা টাইমস/১৯জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন