শ্রীপুরে প্লাস্টিকের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেত শিল্প

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। ফলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। এ পেশায় টিকতে না পারে ভিন্ন পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলার বরমী, কাওরাইদ, রাজাবাড়ি, পার্শ্ববর্তী কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া সহ আরও কয়েকটি এলাকায় বংশ পরম্পরায় বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। পুঁজি স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস মুরগির খাঁচা, ঘাড়ো, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, ঢুলি, কলাই, বুরং, হাতপাখা।
কালের বিবর্তনের প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে বরমী ইউনিয়নের খুঁজে খানি গ্রামের জামাল ও আনোয়ার জানান, এক সময় তাদের কাছে ১০-১২ জন করে বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ছিলেন। তখনকার দিনে একজন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা। এখনকার দিনে সে কারিগরদের বেতন দিতে হয় ৫০০-৬০০ টাকা। তাও সিজনের সময় পাওয়া যায় না।
তারা আরও জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আগে একটি বাঁশের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা, সেখানে এখন প্রতিটি বাঁশ
কিনতে ৩১০-৩৬০ টাকায়। আর নির্বিচারে বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার ফলে বেত গাছ এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলার কালিয়াকৈর এর ফুলবাড়িয়া এলাকায় শৈলেন দেবনাথ কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন।
তিনি বলেন, বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করতে খুব একটা লাভ হতো না। এখন কৃষি খেতে কাজ করি, দিন বাদে ৪-৫শ টাকা রোজগার হয়। ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গরা আছেন সহজ শর্তে তাদের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এই পেশার কারিগরদেরকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, প্লাস্টিক ও মেলামাইন স্টিলের পণ্যের দাপটে, বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি জিনিসপত্র বিলুপ্তের পথে। এই পেশায় কারিগররা ফিরতে চাচ্ছেন না, তারা যেন অন্য পেশায় না যেতে পারে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা। বাঁশ ও বেত শিল্পের বিকল্পে যে-সব পণ্য বাজারে এসেছে এসব পণ্য বর্জন করতে হবে। বাঁশ ও বেত তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হবে। বেশি বেশি বাঁশ ও বেত চাষ করে এ শিল্পের প্রতি কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই এই শিল্পকে রক্ষা করা যাবে।
(ঢাকা টাইমস/২৫জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন