জামালপুরে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
শনিবার দুপুরে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিনই বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা, তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সাতটি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইসলামপুর উপজেলার সঙ্গে বানিয়াবাড়ী, দেলিরপাড়, গুঠাইল বাজার, আমতলী বাজার থেকে ডেবরাইপ্যাচ, উলিয়া বাজার বামনা, শিংভাঙ্গা, উলিয়া, সোনামুখী, বেলগাছা, জারুলতলা, কুলকান্দি ও সদর ইউনিয়নের পচাবহলা, মলমগঞ্জ, শশারিয়াবাড়ীসহ পশ্চিমাঞ্চলের আটটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার নটারকান্দা সড়কসহ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ।
ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের রফিকুল ইসলাম, সুলতান মাহমুদ্ ও আব্দুল করিম বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাজারে পানি উঠায় বিরাট সমস্যায় পড়েছি। বড় কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি।
ইসলামপুরের চিনাডুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, পুরো ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে। বানভাসি মানুষ খুব কষ্টে দিন যাপন করছে। হঠাৎ করে পানি আসায় অনেকের জিনিসপত্র ও হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে গেছে।
ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আ. মালেক জানান, পুরো ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্লাবিত এলাকায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এছাড়া সকল চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশদের সার্বক্ষণিক সতর্ক ও মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ধর্মমন্ত্রী আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি মতবিনিময় শেষে ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়ন ও কুলকান্দি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বন্যার পানির কারণে জেলায় ১শ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যাদুর্গতদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কয়েকশ পরিবার গবাদি পশু নিয়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের জন্য ৩শ ম্যাট্রিক টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ১১টি মেডিকেল টিম।
(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/পিএস)