অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মর্যাদা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে মানবাধিকার কমিশন

অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অনগ্রসর, অবহেলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি ও বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কমিশন।’
মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে ‘জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত কমিটি এবং দলিত, হিজড়া ও অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত থিমেটিক কমিটি’র সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দলিত জাতিগোষ্ঠীর ভূমি, বাসস্থান, কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকার বিদ্যমান সমস্যা ও জটিলতা দূর করে টেকসই সমাধানে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, তাঁদের সকল রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক সুবিধার অভিগম্যতা দ্রুত নিশ্চিত করাও আমাদের কর্তব্য।'
তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের পুনর্বাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করা অধিকার হরণের সামিল। সকলের আবাসন নিশ্চিতকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মিরনজিল্লা ও সুইপার কলোনিসহ অন্যান্যদের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করণে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঝিমাইপুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ভূমি অধিকার সুরক্ষায় কমিশন উক্ত স্থান পরিদর্শন করেছে এবং বাস্তবসম্মত ও যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এসময় ক্রমাগত ও বহুমুখী প্রচেষ্টায় তা ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর ধারণা দূর করতে হবে এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার এবং পাঠ্যবইতে এই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে সহায়ক হবে। পাঠ্যবইতে হিজড়াদের বিষয়টি বাদ দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক সম্পর্ক, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং একইসঙ্গে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত বাস্তবতার কারণে এ বিষয়টিকে সরলীকরণের কোনো অবকাশ নেই। আবার এ ধরনের পদক্ষেপ কোনো চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই মর্মে কমিশন মনে করে। আপাতত বিষয়টিকে অবদমিত রাখলেও প্রাকৃতিক কারণেই ভবিষ্যতে তা উদ্ভূত হবে। তাই যৌক্তিক কারণেই কমিশন উক্ত সুপারিশের সাথে দ্বিমত পোষণ করে।
ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে সমাজের মানুষের ধারণাগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সামাজিক সচেতনতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে আমাদের সকলের জোড় প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোর প্রশিক্ষণে বিষয়টি সম্পৃক্ত হলে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে। তিনি প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণে কার্যকর পরামর্শ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সভায় লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর মানুষের কতিপয় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ, মৌলভীবাজারে ঝিমাই পুঞ্জির জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ও জীবিকা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণ ও রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সম্মানিত সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, কংজরী চৌধুরী, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. তানিয়া হক উপস্থিত ছিলেন। কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং ও অন্যান্য সদস্যরা।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/এলএম/কেএম)

মন্তব্য করুন