আমদানি–রপ্তানি সম্ভাবনা যাচাইয়ে ভারতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল

বাংলাদেশের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ছয় দিনের সফরে ভারতে গেছে। পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ভারতীয় বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি–রপ্তানি কার্গো পরিবহনের সম্ভাবনা যাচাই করতে তাদের এই সফর। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মোস্তফা কামাল। প্রতিনিধিদলে আরও আছেন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বন্দরের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দ্য স্টেটসম্যানের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেন্নাই, কৃষ্ণপত্তম, বিশাখাপত্তম, কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর পরিদর্শন করেছে প্রতিনিধি দলটি। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ভারত–বাংলাদেশ নৌপরিবহন সচিব পর্যায়ের সংলাপে (এসএসএলটি) এই বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছিল। এরপরই ধারাবাহিকতায় ভারত সফর করছেন প্রতিনিধি দল।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সফরের উদ্দেশ্য হলো ভারতীয় বন্দরে প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা, বাণিজ্যিক সুফল এবং অবকাঠামোগত সুবিধা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করা যাতে, বাংলাদেশি কার্গো পরিবহনের সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা যায়।
ভারতীয় অভ্যন্তরীণ জলপথ কর্তৃপক্ষ (আইডব্লিউএআই), বন্দর ও নৌপরিবহন ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, নৌপরিবহন মহাপরিচালক এবং পরোক্ষ কর ও কাস্টমসের কেন্দ্রীয় বোর্ড সফরকারী বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রয়েছে।
প্রতিনিধি দলটি ভারতের পূর্ব উপকূলের বিভিন্ন বন্দরের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— চেন্নাই বন্দর কর্তৃপক্ষ, কৃষ্ণপত্তম বন্দর, বিশাখাপত্তম বন্দর, শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের অধীনে কলকাতা ডক এবং হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স।
প্রতিনিধিদল ঢাকা ও বিশাখাপত্তমের মধ্যে রিভার ক্রুজ সার্ভিস চালুর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। আইডব্লিউএআই–এর পরিচালক (ট্রাফিক) এ কে বানসাল প্রতিনিধিদের জানান, ইন্দো–বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে (আইবিপি) ক্রুজ পরিষেবা ইতিমধ্যেই রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশ থেকে বিশাখাপত্তম এবং পূর্ব উপকূলের অন্যান্য বন্দর পর্যন্ত উপকূলীয় রুটে আরও বাড়ানো যেতে পারে।
আইবিপি রুটে অভ্যন্তরীণ জাহাজ ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে হলদিয়া/কলকাতায় কার্গো ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও প্রতিনিধিদলের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় আইডব্লিউএআই মাল্টি–মোডাল টার্মিনাল সফরের সময় আলোচনা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও চিহ্নিত করেছে। জবাবে ভারতীয় পক্ষ বিস্তৃত তথ্য বিশ্লেষণ এবং তুলনা করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশি রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারকদের জন্য কলম্বো, সিঙ্গাপুর এবং পোর্ট ক্লাং–এর মতো বিদ্যমান ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর পরিবর্তে ভারতীয় বন্দরগুলো ব্যবহার করার সুবিধাদি প্রদর্শন করে।
প্রতিনিধি দল ভারতের পূর্ব উপকূলের বন্দর বনাম কলম্বো, সিঙ্গাপুর, পোর্ট ক্লাং, চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রা থেকে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ, সময়, পণ্যসম্ভার এবং সুবিধার তুলনামূলক প্রতিবেদনের অনুরোধ করেছে। ভারতীয় পক্ষ এই পদক্ষেপের সুবিধার্থে পণ্যের প্রোফাইল এবং গন্তব্য বন্দরের বিবরণ চেয়েছে।
বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান ভারতীয় পক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারতের তথ্য, বিশ্লেষণ এবং তুলনা পর্যালোচনা করতে ঢাকায় অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) একটি বৈঠক হবে। একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতকে সেটি জানানো হবে। উভয় পক্ষই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা করার ব্যাপারে আশাবাদী।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/কেএম)

মন্তব্য করুন