হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিরই চিকিৎসা প্রয়োজন

মো. শাহানুর আলম, ঝিনাইদহ
  প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৯:০০
অ- অ+

চিকিৎসক সংকট, রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স অচল, বিভিন্ন বিভাগে জনবলের অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মানুষের চিকিৎসা দেওয়া তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠানটিই যেন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এটির চিকিৎসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বছর ধরে চালকের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স, রয়েছে চিকিৎসক সংকটও। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানেন না, কবে আসবে চালক এবং পূরণ হবে চিকিৎসকদের শূন্যপদ।

সরেজমিন হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ তালাবদ্ধ। ভেতরে পড়ে আছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি। সামনে রাখা হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস। এক বছর ধরে চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা চলমান না থাকায় এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতালের ভেতরে ঢোকার সময় বহির্বিভাগে দেখা গেছে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাত্র তিনজন চিকিৎসক এসব রোগীর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

এছাড়া ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, শয্যা সংকটে মেঝেতে রয়েছেন বেশ কয়েকজন রোগী। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে হাসপাতালের মেঝেও রয়েছে অপরিচ্ছন্ন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও ১৮ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজনের মধ্যে দুজন ডেপুটেশনে অন্যত্র চলে গেছেন।

১৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে ৪-৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে প্রায়ই বাইরে থাকেন। এতে প্রতিনিয়ত বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

জানা যায়, ২০০৩ সালে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শুরু থেকেই একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছিল রোগীদের। এরই মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে চালক শফিউদ্দীন অবসরে চলে যান। তার পরিবর্তে কোনো চালক নিয়োগ না দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় এ্যম্বুলেন্স সেবা। ইতোমধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলাসহ কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজশাহী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে রোগী নিয়ে যেতে কয়েক গুন টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকলে মাত্র ২০ টাকা প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দিয়ে বাইরে রোগী নিয়ে যাওয়া যায়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোতে করে রোগী নিতে হচ্ছে। জরুরি মুহূর্তে ওই সকল গাড়ির চালকেরাও গলাকাটা ভাড়া দাবি করে। এছাড়া প্রায় সময় দালালদের কাছে নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার উপক্রম হয়।

স্বজল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, হরিণাকুণ্ডু থেকে ঝিনাইদহে রোগী নিয়ে গেলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া লাগে ৪০০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস চালকেরা ভাড়া নেন দেড় হাজার টাকা। অনেকে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান। আগে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়ায় রোগী নিলে ভাড়া পড়ত ৭০০ টাকা। এখন তারা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৭৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তিন-চারজন চিকিৎসক দিয়ে এত মানুষের সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। তিনি প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩৫০ জন রোগী দেখেন বলে জানান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জামিনুর রশিদ বলেন, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব সময় ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইরানের অতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
শেখ হাসিনার আদালত অবমাননার মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
ইরানে দখলদার ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে ৬৩৯
‘বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ শুক্রবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা