কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৫:৫০| আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:০২
অ- অ+

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের টালবাহানা, ২০১৮ সালের আন্দোলনকারীসহ বর্তমান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর নেতৃবৃন্দরা।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠক মো. রাশেদ খাঁন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে ২০১৮ সালের মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে চলমান লুটপাট, আর্থিকখাতের বিপর্যয়, আজীজ- বেনজীর- মতিউরদের দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে রেল চুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি সফল ছাত্র আন্দোলন। ঐবছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৮ এপ্রিলে থেকে জোরালো আন্দোলনে পরিণত হলে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আর কোন কোটা থাকবেনা, যেহেতু সংস্কার করলে আবার আন্দোলন হবে, তাই কোটা বাতিল করা হবে।

রাশেদ খান বলেন, এরপর ঘোষণার দেড় মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছিলো না। যে কারণে ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে সংবাদ সম্মেলন বানচাল করে দেয়। সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুনসহ বেশ কয়েজন গুরুতর জখমের শিকার হয়। এরপর থেকে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও দমনপীড়নের শুরু করে সরকার। এতো দমন-পীড়নের পরেও কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধ করা যায় নি। অবশেষে সরকার বাধ্য হয়ে ৪ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ছাত্রসমাজের কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ হয়।

তিনি বলেন, আমরা সে সময়ে কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। সেসময় ২ জুলাই সরকার তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা বাতিল আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। তাহলে তিনি কেন বাতিল করার কথা বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা তো বাতিল চায়নি।

ক্ষমতাসীনদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি গত ১৩ জুলাই বলেছেন, '২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনকারীদের একজনও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি।'

এছাড়া রবিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে?

তিনি আরও বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন বক্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৮ সালে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, তারাই পরবর্তীতে মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। যারা সংগঠক পর্যায়ে ছিলেন, তাদের নামে মোট ৬টি মামলা দেওয়া হয়। যে মামলাগুলোতে তাদের এখনো হাজিরা দিতে হচ্ছে, কোন কোন মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, বিচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে যেখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি করা হয়, সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠকদের চাকরি পাওয়ার কোন সুযোগ রাখা হয়েছে? বরং তারা যাতে চাকরি না পায় এজন্য তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

আর ছাত্রলীগের সভাপতি ৯ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। এরমধ্যে ৫ বছরই তিনি ফেল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যার ছাত্রত্বই থাকার কোন সুযোগ নেই, তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কেউ চাকরি পায়নি বলে মিথ্যাচার করেছে। সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, তাদের অধিকাংশ এখন চাকরি করছে।

২০১৮ সালে যারা আন্দোলন করেছে, ২০২৪ সালে যারা আন্দোলন করছে, তাদের কারওই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ক্ষোভ নেই জানিয়ে রাশেদ খাঁন ্আরও বলেন, সরকার তার নিজের সুবিধার জন্য বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার দাবি আমরা সবসময় জানিয়েছি। বিদ্যমান বাস্তবতায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা যৌক্তিকহারে সংস্কার করা যেতে পারে। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম কোটা সুবিধা বাস্তবসম্মত নয়। যেটি অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও বলছেন, আমরা কোটার জন্য যুদ্ধ করিনি, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে দেশ স্বাধীন করেছি। এছাড়া সংবিধানের ১৯(১), ২৯(১),২৯(২) অনুচ্ছেদে চাকরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা আছে। সুতরাং কোটা ব্যবস্তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সংবাদ সম্মেলনে করার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলার বিষয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের উপর হামলা হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। যেকারণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতি ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করুন। আপনারা সংখ্যায় বেশি। আপনাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে বিজয় আপনাদেরই হবে, ইনশাআল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠক শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, শহিদুল ইসলাম, কাওসার আলি প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/জেবি/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড
নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার 
হামদর্দ বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভা অনুষ্ঠিত
পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা