কারফিউর প্রভাবে পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪৯
অ- অ+

বিগত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবনের সব কর্মকাণ্ড। আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা বন্ধে সরকারের কারফিউ জারিতে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। যার প্রভাব পরেছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটাতেও। নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে দুর্ভোগে পড়েছেন।

কারফিউ জারির পর কুয়াকাটায় ভ্রমণে এসে আটকা পড়েন ১৫০ জন পর্যটক। বেশ কয়েকদিন ধরে দুর্ভোগে থাকা আটকে পড়াদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয় সেনা সদস্যদের পাহাড়ায়।

এই মুহূর্তে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রায় পর্যটকশূন্য। অলস সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ হোটেল কতৃপক্ষ ছুটি দিয়েছে কর্মচারীদের। চলমান এই সঙ্কট কেটে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে হুমকিতে পরেছে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত। সাপ্তাহিতে ছুটিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখর থাকলেও গত শুরুবার থেকে পর্যটক শূন্যের কোঠায় চলে আসে। শনিবার থেকে থেকে টানা ৫ দিন কুয়াকাটা পর্যটন নগরীতে রয়েছে সুনসান নীরবতা। খালি পড়ে আছে সৈকতে রাখা ছাতা-বেঞ্চি। অলস সময় পার করছেন মোটরবাইক, ফটোগ্রাফার, স্পিড বোড-সীবোট চালক, ঝিনুক-আচার, ফিশ-ফ্রাই ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৮টি পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। সৈকত পর্যটকশূন্য থাকায় তারা হতাশ।

দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নানা ঘটনার সূত্রপাত হলেও পটুয়াখালী উপকূল তথা পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু কারফিউ জারির কারণে মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ রুটের যানবাহনসহ গণপরিবহন চলাচল করতে না পারার ফলে জনজীবনে ভোগান্তি ছিল চরমে। চারদিকে নেমে আসে থমথমে পরিবেশ। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে জেলা, উপজেলাসহ কুয়াকাটার গুরুত্বপূর্ন স্থানে প্রশাসনের নজরদারি ছিল লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে স্বল্প পরিসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবহন চলাচল করলেও যাত্রী সঙ্কটে রয়েছে।

এ বিষয়ে সৈকতের সি গোল্ড রিসোর্ট এর কর্মচারী মো. সিজান বলেন, ‘পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পর্যটক না থাকায় অবসর সময় কাটাচ্ছি। কারফিউর কারণে কোনো পর্যটকের আনাগোনা নেই।’

আবাসিক হোটেল কানসাই ইনের ম্যানেজার মো. জুয়েল ফরাজি বলেন, ‘কারফিউর কারণে আমার হোটেলে প্রায় ১৫জন পর্যটক আটকা পড়েছিলেন। তাদেরকে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে গন্তব্যে পৌঁছানো হয়েছে। এখন পুরো হোটেলের রুম ফাঁকা পড়ে আছে। কবে নাগাদ আবার পর্যটক আসবে সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে হাতেগোনা কিছু পর্যটক রয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আগত।’

হোটেল গোল্ডেন ইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম জহির বলেন, ‘পর্যটন ক্ষেত্রে সবার আগে ধাক্কা লাগে। এ ধাক্কা কাটতে সময় লাগে অনেকদিন। রাজনৈতিকসহ নানা সমস্যা তৈরি হলেই আমাদের হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমরা থাকি সংকটের মুখে। খরচ বাড়ে আয় আসে না। বর্তমান সংকট কাটিয়ে কবে উঠতে সক্ষম হব তা জানা নেই।’

ক্যামেরা পারসন মো. আলমাচ খান বলেন, ‘প্রতিদিন এক হাজার টাকা থেকে ১৫শত টাকা আয় হতো। গত কয়েকদিনে কোনো আয় নেই। বৌ বাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো এখন কষ্ট হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি চাই, না হয় না খেয়ে মারা যেতে হবে।’

সৈকতে চা বিক্রেতা আল আমীন বলেন, ‘মানুষ অস্থিরতা দেখে ভয় পাচ্ছে ঘর থেকে বের হতে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার পর থেকেই কোনো পর্যটক আসছে না। ফলে কোনো বেচা বিক্রিই হয় না। কষ্ট করে দিন পার করি।’

হোটেল মোটেল অনার্স এসোসিয়েশন সাধারণত সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘দেশে কোনো অস্থিরতা থাকলে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। গত কয়েক দিন ধরে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অস্থিরতায় পর্যটকরা বাধ্য হয়ে ভ্রমন থেকে মুখ ফিরেয়ে নিয়েছেন। এ সঙ্কট দূর না হলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবে। আমাদের সঙ্কট উত্তোরণে সময় লেগে যায় অনেক। আয় না হলেও আমাদের কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খরচ কিন্তু কমে না।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/এসাআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশস্থলে ছাত্রলীগের হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ
মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: মামলার এজাহার থেকে পাঁচজনের নাম বাদ দেয় কে? জানালেন ডিএমপি কমিশনার
সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা