সাত দফা দাবিতে ‘জাস্টিস ফর শিমুল’ এর অবস্থান কর্মসূচি :

সাত দফা দাবিতে ‘জাস্টিস ফর শিমুলের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে মাইওয়ান গ্রুপের নিহত নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা শিমুলের স্বজনরা।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
তাদের দাবি গুলো হলো—শামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যুর সমস্ত দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারকে নিতে হবে। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির ও নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার রাফায়েতের যোগসাজশে গ্রেপ্তারকৃত ডাক্তারের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তাই ডাক্তার জহির আল-আমিন লাশ দাফনের পূর্বেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির ও নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার রাফায়েতের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নিহত শামসুদ্দোহা শিমুলের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যাতে পরিবর্তন করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাসপাতালের কার্যক্রম মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে অন্য কোনো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অভিযুক্ত সার্জন প্রফেসর ডা. জাহের আল-আমীন এবং এনেস্থেশিয়া ডা. ইফতেখারের সনদ বি.এম.ডি.সি কর্তৃক স্থায়ীভাবে বাতিল করতে হবে এবং ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সকল প্রাইভেট হাসপাতালের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে এবং তা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যে প্রাইভেট হাসপাতাল চিকিৎসা প্রদানে অনুপোযোগী সেই হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স দ্রুত বাতিল করতে হবে, যেন কোনো রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার না হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতালে সেপ্টোপ্লাস্টি সার্জারি করার সময় কর্তব্যরত ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, উদাসীনতা এবং সর্বোপরি ভুল চিকিৎসার কারণে বাংলাদেশ কর্পোরেট সেক্টরের আইকন, অটবি ফার্নিচার কোম্পানির সাবেক জেনারেল ম্যানেজার, এসি আই গ্রুপের সাবেক ডিরেক্টের এবং মিনিস্টার- মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুলের অকাল মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার নিহতের ভাগ্নে রিয়াজ ইসলাম বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় কমফোর্ট হাসপাতালের ডাক্তার ড. জাহির আল-আমীনকে প্রধান আসামি করে মোট ৪ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করে।
বাদী পক্ষের অভিযোগ, মামলা করার সময় আসামিদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেজন্য থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবিরকে বারবার মামলাটির ধারা পরিবর্তন করে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি অজ্ঞাত কারণে ধারা পরিবর্তন না করে মামলাটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪ এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী রুজু করেন। উক্ত ধারা অনুযায়ী একজন আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছর হয় যা অত্যন্ত প্রহসনমূলক এবং সুষ্ঠু বিচারের পরিপন্থি।
এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতালে সেপ্টোপ্লাস্টি সার্জারি করার জন্য সামসুদ্দোহা শিমুলকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার ড. জাহির আল-আমীন এবং ইফতেখারুল কাওসার রোগীর অপারেশন করতে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। সাধারণত উক্ত অপারেশন শেষ করতে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট লাগলেও ডাক্তার অনেক সময় নেওয়ায় রোগীর পরিবারের সদস্যরা উদগ্রীব হয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তারা বলতে অস্বীকার করলেও কর্তব্যরত ডাক্তার উপায়ন্তর না পেয়ে এক পর্যায়ে ওটি থেকে বের হয়ে স্বজনদের জানায় রোগী মারা গেছে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ঐ ডাক্তার তাৎক্ষণিক আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঐ ডাক্তারকে অজ্ঞাত জায়গা থেকে বের করে লোক দেখানো পুলিশের হাতে সোপার্দ করে দেন।
উল্লেখ্য, উক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে তিনি এক মহিলা রোগীর কানের ভুল সার্জারির করার কারণে তার চিকিৎসা করার লাইসেন্স এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল যা এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এমন একজন ডাক্তার কি করে উক্ত হাসপাতালে ডা. হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ এবং কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজন, চিকিৎসারত রোগী ও তাদের স্বজনরা।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) জুমার নামাজের পর সামসুদ্দোহা শিমুলের জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে তার বাবা মা এর কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান, যেহেতু সামসুদ্দোহা শিমুলের লাশ দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই আসামিরা জামিন পেয়েছেন তাই মামলায় সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তাই সঠিক বিচার দাবিতে আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।
(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/পিএস)

মন্তব্য করুন