চাই ঝকঝকে দাঁতের ঝলমলে হাসি, ব্যথা হলে যা করবেন
দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বুঝে না। সুস্থ দাঁতে সুন্দর হাসির জন্য সকলের উচিত দাঁত থাকতে দাঁতের যত্ন নেয়া। সুস্থতা এবং আত্মবিশ্বাসের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সুস্থ দাঁত। দাঁত থাকলেই হল না, সেটা কতটা পরিষ্কার, ঝকঝকে ও কতটা সুগঠিত তার উপরে কিন্তু একজনের সার্বিক সৌন্দর্য নির্ভর করবে। অর্থাৎ রূপের কদর পেতে দাঁতের সৌন্দর্যে দিকটা নজর করা খুবই দরকার।
দাঁতে এনামেল নামক এক প্রকার উপাদান থাকে, যা দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। নানা অনিয়মের কারণে এই উপাদানটি ক্ষয়ে গেলে দাঁতের ভিতরে থাকা স্নায়ুগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে, বিশেষত ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এই স্নায়ুগুলির সংস্পর্শে এলে শিরশির করে ওঠে দাঁত। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘টুথ সেনসিটিভিটি’ বলে। এই সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সঠিক নিয়ম না জেনে বাড়িতে দাঁতের দাগ তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ। কারও মতে, বেকিং সোডা রোজ টুথপেস্টে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে, আবার কেউ জোরে চাপ দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশ করলেই ভাবেন ফল মিলবে। এই অভ্যাস দাঁতের এনামেল নষ্ট, মুখের ভিতরে স্বাস্থ্য দুর্বল, দাঁতের গোড়া নরম করে। অর্থাৎ হিতে বিপরীত হয় বেশি।
১৮ বছর বয়সের পর চিকিৎসকের পরামর্শে এক থেকে দেড় বছর অন্তর একবার স্কেলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এতে দাঁত পরিষ্কারও থাকে ও মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। খুব সহজে খাবারের মধ্য দিয়ে রোগ জীবাণু শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
ক্লিনিকে গিয়ে স্কেলিং করার ক্ষেত্রে একজনের মুখের স্বাস্থ্য, মাড়ি, দাঁত পরীক্ষা করে সঠিক পদ্ধতি বলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আল্ট্রাসনিক মেশিনের মাধ্যমে দাঁত স্কেলিং করে ঝকঝকে করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যাদের বেশি কথা বলতে হয় কাজের ক্ষেত্রে, অভিনয় জগতের মানুষজন, পাবলিক স্পিকার, গান করেন বা স্কুল কলেজে পড়ান এরা দাঁত সাদা করার জন্য ব্লিচিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে দাঁতকে স্কেলিং ও পলিশিংয়ের পর পারক্সাইড ভিত্তিক ব্লিচিং এজেন্ট ব্যবহার করে দাঁতকে সাদা করা হয়।
ঘরোয়া উপায়ে
দাঁত মাজার সময় টুথপেস্টের মধ্যে মিশিয়ে নিন বেকিং সোডা। খুব আলতো হাতে ব্রাশ করুন। সপ্তাহে ২-৩ বারের বেশি করবেন না।
দিনে দু’বার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দ্বারা দাঁত মাজুন। অন্তত একবার ফ্লস করুন এবং ফ্লোরাইডযুক্ত পানি পান করুন।
নিয়মিত খেয়াল রাখুন মুখে যেন কোনও খাবারের কণা আটকে না থাকে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর লবণ গরম পানিতে মুখ ধোয়া, মাউথ ওয়াশ ব্যবহার ও কুলি করার অভ্যাস রাখুন।
আপেল, সেলারি এবং ব্রকোলির মতো উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবারগুলো লালাক্ষরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এগুলো খান।
দাঁতের হলদে দাগ দূর করতে এবং মাড়ির সমস্যা কমাতে সহায়ক লবণ ও সরিষার তেল। লবণ ও সরিষা তেলের এই টোটকা মুখের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার জেরে ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয় না। এতে দাঁতের ক্ষয়ও রোধ করা যায়। এক চিমটে লবণ নিন। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি দিয়ে মুখের ভিতর, দাঁতে ভাল করে মালিশ করুন। এটি দাঁতের হলদেটে ভাব নিমেষে দূর করে দেবে। পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল রাখবে।
হাফ টেবিল চামচ লবণ, সাথে অল্প লেবুর রস ও অল্প একটু পেস্ট একসাথে মিলিয়ে নিন। এরপর দাঁতে লাগিয়ে মিনিট খানেক অপেক্ষা করুন। পেয়ে যাবেন সাদা দাঁত। সপ্তাহে ১-২ বারের বেশি এই পেস্ট লাগাতে যাবেন না।
কোন পর্যায়ে এসে করবেন
মুখের দুর্গন্ধ দূর: মুখ শুষ্ক এবং দীর্ঘদিন ধরে মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা হতে শুরু করলে করুন।
মাড়ি দিয়ে রক্তপাত বন্ধ: নিয়মিত সঠিক উপায়ে দাঁত ব্রাশ না করলে লালারসের সঙ্গে মুখের মধ্যে থাকা জীবাণু ও খাদ্যকণা মিলে ডেন্টাল প্লাক নামের সাদা আঠালো পদার্থ তৈরি করে দাঁতের গোড়ায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্কেলিং করলে উপকার মেলে।
কিছু অভ্যাস এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, চা কফি পান বেশি করা, পান খাওয়া, ধূমপান করা, খৈনি, গুটখা সেবন
রঙিন খাবারের প্রতি আসক্তি- সুস্থ ও সুন্দর দাঁত পেতে এসব কিছু এড়িয়ে চলুন।
দাঁতের ব্যথা হলে যা করবেন
দাঁত, মাড়ি, গলায় ব্যথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে লবণ গরম পানি। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে যে কোনও ইনফেকশন সেরে যাবে।
এক টেবিল চামচ হলুদ, আধ চামচ সর্ষের তেল ও আধ চামচ লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দাঁতে লাগালে কমতে পারে দাঁত শিরশির করার সমস্যা। হলুদে থাকে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি জীবাণুনাশক ও প্রদাহনাশক হিসেবে বেশ কার্যকর।
লবণ ও গোলমরিচ সম পরিমাণে মিশিয়ে জল দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। দাঁতের উপর এই পেস্ট লাগিয়ে করেক মিনিট রাখুন। দাঁতে ব্যথা কমে গেলেও এটা কয়েক দিন করে গেলে আরাম পাবেন।
এক কোয়া রসুন থেঁতো করে অল্প নুনের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন। খুব বেশি যন্ত্রণা হলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। যন্ত্রণা কমে যাবে।
দুটো লবঙ্গ থেঁতো করে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগান। আধ গ্লাস জেল লবঙ্গ তেল মিশিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
পেঁয়াজের অ্যান্টিসেপটিক গুণ যে কোনও ক্ষত, ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। দাঁতে ব্যথা হলে এক টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেয়ে নিন। যদি বেশি ঝাঁঝ লাগে তবে দাঁতের উপর পেঁয়াজ রাখলেও আরাম পাবেন।
দাঁতে ব্যথা হলে একটা বা দুটো পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন। দাঁতের গো়ড়ায় পাতার রস ঢুকে ব্যথায় আরাম পাবেন।
তুলোয় মুড়ে এক টুকরো বরফ ব্যথা দাঁত, মাড়িতে কিছু ক্ষণ চেপে ধরুন। এতে ব্যথা কমতে থাকবে।
দূর্বার রস দাঁতে ব্যথা কমাতে খুব উপকারী। দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রতি দিন দূর্বার রস খান।
(ঢাকাটাইমস/১১ সেপ্টেম্বর/আরজেড)