আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের ন্যূনতম ২ জনকে সহকারী উপদেষ্টা করার দাবি এনডিএফের

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতিশীলতা বাড়াতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের মধ্য থেকে সহকারী স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে ন্যূনতম দুই জনকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বৈষম্য ও নিপীড়ন মুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার লক্ষ্যে’ এনডিএফ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এই দাবিসহ সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও ১৭টি দাবি জানানো হয়েছে।
এনডিএফ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো-
১. ফ্যাসিবাদের দোসর, যাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে গতিশীলতা নিয়ে আসতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ, সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বৈরাচারের দোসরদের অতিদ্রুত সরিয়ে সৎ, দক্ষ, যোগ্য এবং বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে।
২. ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহত ছাত্র জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে একই সাথে তাদের বিএমডিসি এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা/ কর্মচারীর তালিকা প্রণয়ন করে তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে সেই বদলি আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
8. অতি দ্রুত বৈষম্যের শিকার সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীগণকে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেককেই দ্রুততার সাথে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা, ও মেধার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ক্যাডারদের নিয়মিত প্রমোশন নিশ্চিত করা।বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের মতো পোস্ট খালি না থাকলেও ইনসিটু ও সুপার নিউমারারি প্রমোশন চালু করতে হবে । এজন্যে প্রতিবছর ডিপিসি বা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড আয়োজন করতে হবে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নোটিশ এবং প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. বিগত সময়ে যত দুর্নীতি হয়েছে তার যথাযথ তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব প্রদান করে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৬. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবার গুণগতমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ছাত্র সমন্বয়কদের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
৭. আন্ত ক্যাডার বৈষম্য দূর করতে স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকদের চাকরির বয়স সীমা অনুযায়ী নিয়মিত পদোন্নতি দিতে হবে।
৮. ভুল এবং মানহীন চিকিৎসায় জনগণের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতি বন্ধ করতে নিবন্ধনবিহীন মানহীন হাসপাতালসমূহের তালিকা করতে হবে। একই সাথে এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ডাক্তার শব্দের অপব্যবহার বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সারা দেশে ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। ভুয়া চিকিৎসকদের তালিকা প্রণয়ন করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ফার্মেসিগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওটিসি ঔষধ ব্যতীত অন্যান্য ঔষধ বিক্রিতে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৩ কে রোগী এবং চিকিৎসক বান্ধব করতে হবে। বিশেষ করে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের শারীরিকভাবে হরয়ানীকারীদের শাস্তি তথা জেল জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত রাখতে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া ও প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে এবং সকল শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।
১১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতি দমন করতে ইউএইচএফপিও, সিভিল সার্জন, ডিভিশনাল ডিরেক্টর এর মত প্রশাসনিক পোস্টের কর্মকর্তাদের (স্বাস্থ্য বিভাগ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য) ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার/ বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। (ইতোমধ্যে মহামারিকালীন সময়ে এটি প্রয়োগ করার একটা আইন আছে)।
১২. নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিক ভাবে কাজে সহায়তাকল্পে প্রতিটি হাসপাতালে (সরকারি/বেসরকারি) ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৩. বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরো অধিকহারে চিকিৎসকদের বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১৪. বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানে উন্নীত করার ব্যবস্থা করতে হবে বিশেষ করে বাংলাদেশের চিকিৎসা পেশা সংশ্লিষ্ট ডিগ্রীসমূহ (এমবিবিএস, ডিপ্লোমা, এমডি, এমএস, এফসিপিএস ইত্যাদি) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুমোদনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫. বিএসএমএমইউ সহ সকল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি চিকিৎসকদের অধ্যয়ন প্রক্রিয়া সহজ করা। তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. ছাত্র জনতার বিপ্লবের ফসল ঘরে তুলতে তথা দেশের আপামর জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই লক্ষ্যে শক্তিশালী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেডিক্যাল এথিকস অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-গোত্র- রাজনৈতিক পরিচয় সবকিছুর বাইরে গিয়ে একজন চিকিৎসকের প্রধান দ্বায়িত্ব হচ্ছে রোগীর চিকিৎসা করা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহত নিহতদের তালিকা করা হয়েছে। আমরা প্রায় সব হাসপাতালে আহত রোগীদের খোঁজ রাখার ব্যাপারটি অব্যাহত রেখেছি; যাতে সবাই সুচিকিৎসা পায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সহ-সভাপতি ডা. মো. আতিয়ার রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. শাহাদাত হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক ডা. এ কে এম জিয়াউল হক প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এমআই/এমআর)

মন্তব্য করুন