লক্ষ্মীপুরে বন্যায় কৃষকের ২২৭ কোটি টাকার ক্ষতি
লক্ষ্মীপুরে চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ২০৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতে। এছাড়া পান, আখ, হলুদ, আদা এবং নানা জাতের ফলজ গাছেরও ক্ষতি হয়েছে।
বুধবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার কাজ চলছে বলে জানান জেলা কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা ছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দুই হাজার ৫৩৬.৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা মোট বীজতলার ৭০ ভাগের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬১০.৭০ হেক্টর জমির। যা আবাদকৃত মোট জমির ৫৩ ভাগ। এতে ৩১ হাজার ৭০৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২৪ হাজার ৪২৩ জন কৃষকের ৪ হাজার ৭০.৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার।
বোনা আমনে ৯ হাজার ৭২০ জন কৃষকের এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ১০ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির শরৎকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। যা আবাদকৃত জমির শতভাগ। এতে ২০ হাজার ৭৮০ জন কৃষকের ৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পান নষ্ট হয়েছে ১১২.২ হেক্টর জমির। এতে ১৬৬৩ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার।
আদা নষ্ট হয়েছে ২৪০ জন কৃষকের ৮৩.৩৩ হেক্টর জমির। ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ টাকার।
৩৯ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৮ মেট্রিক টন হলুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০৪০ জন কৃষকের ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
৭৪৪ জন কৃষকের ৯.৩ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ টাকা।
২০৭৩ জন ফল চাষির ৪১.৪৬ হেক্টর জমির ফল বাগান নষ্ট হয়েছে। এতে ২০৭ মেট্রিক টন ফলের ক্ষতি হয়েছে। যারা বাজার মূল্য ২ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, চলমান বন্যা, বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে লক্ষ্মীপুরের ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। কৃষকের আমনের বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পান, সবজি ও ফলজগাছ নষ্ট হয়েছে। যার আর্থিকমূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্নয় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত কৃষকের মাঝে যাতে পুনর্বসান প্রণোদনা সরবরাহ করা যায়। কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা ৬ হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাদের অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা করে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আগাম রবি মৌসুমের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে পেয়েছি। ১৩ হাজার ২০০শ কৃষকের মাঝে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমূখী, মুগ, মশুর, খেশারী, চিনা বাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেয়াজ বীজ বিতরণের জন্য কর্মসূচি আসবে।
আমন ধান চাষীদের উদ্দেশ্যে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের চারা লাগাতে পারবে। তারা যেন নাভি জাতের বিআর-২২, বিআর-২৩ ধানের চারা রোপণ করে। এছাড়া আমরা যে বীজ দিয়েছি, বিআর-৭৫, বিআর-১৭, এ দুটা বীজ দ্রুত কাদাযুক্ত মাটিতে বপন করে ১৫ দিনের চারা জমিতে রোপণ করতে পারবে। এ ধান নির্দিষ্ট সময়ে ভাল ফলন দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘৬৫ হাজার কৃষকের জন্য শীত কালীল সবজির প্রণোদনা চাহিদা পাঠিয়েছি। তারা যাতে বাড়ির আঙিনায় শীতের সবজির চাষাবাদ করতে পারে, সে সহযোগিতা করা হবে। আমরা কৃষকের জন্য যতটুকু করনীয় তা করার জন্য তৎপর আছি।’
(ঢাকা টাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এসএ)