কুমিল্লা মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক আবুর সাথে আ.লীগের বাহারের কিসের এত সখ্য?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৭ | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০৪

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে কুমিল্লার রাজনীতিতে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারই ছিলেন শেষ কথা। কুমিল্লার মানুষ তার কাছে একপ্রকার জিম্মিই ছিল। এই দীর্ঘ সময়কালে বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন আর নির্যাতনে কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি কুমিল্লা সদরের সাবেক এই এমপি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই বাহার সীমান্ত দিয়ে দুর্ধর্ষ স্টাইলে পাড়ি জমান ভারতে। আর তাকে পালাতে সহায়তা করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারি আবু। এমনকি আবুসহ কয়েকজন বিএনপিনেতার সহায়তায় বাবার মতো একই স্টাইলে ভারতে পাড়ি দেন বাহারকন্যা তাহসীন বাহার সূচনা।

সাড়ে ১৫ বছর যিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে মূর্তমান ত্রাস ছিলেন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সেই বাহারের সঙ্গে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবুর কিসের এত ঘনিষ্ঠতা? বাহার-সূচনার ভারতে পালানোর খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।

একাধিক সূত্রে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়ে সাবেক মেয়র সূচনাকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক এমপি বাহার। কুমিল্লা শহরের একটি বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন। এর নেপথ্যে ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবু ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম। ওই আশ্রয় থেকে বাহার ও সূচনা পৃথকভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির এক সপ্তাহের মধ্যে চোরাই পথে দুর্ধর্ষ স্টাইলে ভারতে পালান বাহার। তার অন্তত দশদিন পর গত ২১ আগস্ট বাহারকন্যা সাবেক মেয়র সূচনা ব্রাহ্মণপাড়ার চড়ানল সীমান্ত হয়ে ভারত প্রবেশ করেন। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে ভারতে ঢুকিয়ে দেন ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদলের এক হুন্ডি ব্যবসায়ী। আর কুমিল্লা শহর থেকে শশীদল পর্যন্ত পৌঁছতে সহায়তা করেন আহ্বায়ক আবুসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। এরাই একই কায়দায় বাহারকেও পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাহারের বাড়িতে হামলা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে বাহারের নির্দেশ পেয়ে তার বাড়িতে যান আবু ও ওয়াসিমসহ তাদের অনুসারীরা। তারা হুমকি ধমকি দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে তাড়িয়ে বাহারের বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর থেকে তাদের নিয়োগ করা কয়েকজন ব্যক্তি বাহারের বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন।

এদিকে বিএনপি নেতাদের সহায়তায় বাহারের পালিয়ে যাওয়ার খবরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনা চলছে। এক সময় বিএনপির সাবেক মেয়র সাক্কুর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবুকে নিয়ে আলোচনা বেশি।

আলাপকালে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বাহারের কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বছরের পর বছর ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে ছিলেন। এখন সেই বাহারকে ভারতে পালাতে সহায়তা করেছেন খোদ বিএনপিরই নেতা। এটাকেই বোধ হয় ঘর শত্রু বিভীষণ বলে। মন্তব্য কুমিল্লার এ রাজনীতিকের।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেবল বাহার ও সূচনাই নন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল হক রিন্টু, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মাহমুদ সহিদসহ আওয়ামী লীগের এক ডজন নেতা বিএনপির কয়েকজন নেতার সহায়তায় ভারতে পালিয়ে যান।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সাবেক মেয়র সাক্কুর প্রধান ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন আবু। সরকারি অফিসের টেন্ডার থেকে সবখানে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। বিএনপি সরকারের সময় অপারেশন ক্লিনহার্ট, র‌্যাবের অভিযান ও এক-এগারোর জরুরি অবস্থার সময় আবু বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন তিনি।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক সময়ের বস সাক্কুকে ছেড়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী ইয়াসিনের দিকে ঝুঁকে পড়েন আবু। এক পর্যায়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, পরবর্তীতে মহানগর যুবদলের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। একই কায়দায় বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদ বাগিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :