মাদারীপুরে এতিমখানায় নিম্নমানের খাবার দিয়ে অর্থ লোপাট!
মাদারীপুরে সরকারি এতিমখানায় কোমলমতি শিশুদের নিম্নমানের খাবার দেয়া ও অভিযোগ উঠেছে। কাগজেকলমে প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি থাকলেও বাস্তবে অর্ধেক শিশুও নেই। এতিমদের নামে বরাদ্দের টাকা ১৫ বছর ধরে একই ঠিকাদারের জোগসাজশে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তদন্তে সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা সমাজসেবা অফিস।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিম্নমানের খাবার ও খারাপ আচরণের কারণে আবাসিক হোস্টেল ছাড়তে জিনিসপত্র নিয়ে একে একে বেরিয়ে আসছে এতিম শিশুরা। তাদের ফেরাতে গেলে তোপের মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০০৪ সালে ১০০ জন এতিম থাকার জন্য মাদারীপুরের মধ্য খাগদী এলাকায় গড়ে ওঠে মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবার। বর্তমানে কাগজেকলমে ৬০ জন শিশু ভর্তি দেখানো হলেও বাস্তবে আছে মাত্র ২৭ জন।
মা-বাবাহারা এতিমদের জন্য সপ্তাহে দুই দিন মাংসসহ প্রতিদিন আমিষ খাবার বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু ফ্রিজ ভর্তি মাছ-মাংস থাকলেও ভালো খাবার জোটে না এই ছোট্ট অসহায়দের। দেয়া হয় পচা ও নিম্নমানোর খাবার। এসব খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয় অনেক শিশু।
এ ছাড়া নতুন পোশাক বরাদ্দ থাকলেও তার অর্থ চলে যায় দুর্নীতিবাজদের পকেটে। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়েও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে শিশুদের।
সূত্র বলছে, এই শিশু পরিবারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক রয়েছেন। এতিম শিশুর জন্য জনপ্রতি মাসে খাবারের বরাদ্দ ৩০০০ টাকা। শিক্ষা সামগ্রীতে ৩৫০ টাকা, পোশাক ৩০০ টাকা, প্রসাধনী ১৫০ টাকা, চিকিৎসার জন্য ১০০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। দীর্ঘদিন ধরে উত্তম কুমার পোদ্দার ও ভরত চন্দ্র ঘোষ নামে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী, পোশাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবারহ করে আসছেন।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিশু জানায়, অনেক দিন ধরে তারা ভালো মানের খাবার খেতে পারে না। ফ্রিজ ভর্তি মাছ-মাংস থাকলেও শিশুদের রান্না করে খেতে দেয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা এলে তাদের দেখানোর জন্য ওই দিন ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়।
ঈদে শিশুদের নতুন পোশাক দেয়া হয় না- এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও বারবার আকুতি জানিয়েও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
শিশুদের নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির উপতত্ত্বাবধায়ক মো. সাইদুজ্জামানের। তিনি বলেন, ‘তাদের ভালো মানের খাবার দেয়া হয়। খাবারের মেন্যু করা আছে, ঠিকাদার সেভাবেই খাবার সরবরাহ করেন। এখানকার শিশুদের সাথে প্রতিষ্ঠানের সবাই সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করে।’ একটি চক্র প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ণ করার জন্য এমন অভিযোগ করছে বলে দাবি করেন তিনি।
কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানান মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘শিশুদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পরে সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।’
(ঢোকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/মোআ)