কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর জুলুস ঘিরে দুপক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) জসনে জুলুসকে (মিছিল) কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে মীর আরিফ মিলন (৫২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন।এছাড়া ১০-১২টি দোকানপাট ও ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ১২ টায় কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতির প্রতাপনাথ বাজার এলাকার সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহঃ) মাজার আয়োজিত মাহফিলে মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর আগমনকে কেন্দ্র করে অত্র এলাকায় সুন্নী সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় ইমাম উলামাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে সোমবার সকালে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিলকে কেন্দ্র করে সুন্নী সমর্থক ও ইমাম উলামাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইমাম উলেমা পরিষদের সমর্থক মীর আরিফ মিলন নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত মীর আরিফ মিলন কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি এলাকার মৃত মীর জাবু মিয়ার ছেলে।
কুলিয়ারচর ইমাম উলেমা পরিষদের নেতা মুফতি নাসির উদ্দিন রহমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আসাদুল্লাহ বলেন, ‘ছয়সূতির বাসস্ট্যান্ড এলাকার হুসাইয়নিয়া মাদ্রাসা ও কেন্দ্রীয় মসজিদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করেছে ভাঙচুর করেছে। আমাদের এক ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং অনেকে আহত করেছেন। আমরা কুলিয়ারচর প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় এই বিষয়ে কথা বলেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানার ওসি সাহেব আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আপনাদের আজকের আয়োজিত সিরাত মাহফিল বন্ধ রাখবেন আমরা ঈদে মিলাদুনবীর জশলে জু্লুসের আয়োজন বন্ধ রাখবেন।কিন্ত প্রশাসন আমাদের সিরাত মাহফিল বন্ধ করে তাদের ঈদে মিলাদুনবী মিছিল করতে দেয়। তারা মিছিল করে আমাদের মাদ্রাসা ও মসজিদে হামলা চালায় এসময় আমাদের এক ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
ছয়সূতির প্রতাপনাথ বাজার এলাকা সংলগ্ন সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহঃ) মাজারের খাদেম সৈয়দ ফয়জুল আলম বলেন, ‘গতকালকে গিয়াস উদ্দিন তাহেরী হজুরকে দিয়ে একটি মাহফিল করানোর কথা ছিল কিন্তু কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এসে আমাদের বলেন উনাকে দিয়ে মাহফিল করানো হলে এলাকায় অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হবে। তাই উনারা আমাদের মাহফিল করতে নিষেধ করেন। পরে আমরা মাহফিল আয়োজন বন্ধ করে দেয়। প্রতি বছরের মত এইবারও আহলে সুন্নাতুল জামায়াতের বান্যারে আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর জসনে জুলুসের মিছিল প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রামবাসীসহ কয়েক হাজার নবী প্রেমি লোকজন মিছিলে অংশগ্রহণ করে উদযাপন করেছি। এখন তারা প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে যে আমাদের মিছিল থেকে ৭-৮ জন লোক বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে নাকি হামলা চালিয়ে মিলন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে মেরেছে। এই ঘটনার পরেই মসজিদের মুসল্লিসহ কয়েক শত লোকজন মিলে আমাদের মাজারসহ ৮-১০টি ঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পরে সেনাবাহিনী আসার পর তারা পালিয়ে যায়।’ এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.সারোয়ার জাহান বলেন, ঈদে মিলাদুনবী (সা.) উপলক্ষে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়েতের একটি মিছিল ছিল। সেই মিছিলকে কেন্দ্র করে ইমাম উলেমা পরিষদের লোকদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। তারই জের ধরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল আসলে সে সময়ে মিছিল থেকে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী মসজিদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে দুপক্ষের মধ্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইমাম উলেমা পরিষদের এক সমর্থক মিলন মিয়া নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এমআর)