সবার জন্য বৈষম্যহীন নগর চেয়ে বারসিক-এর ১১ দাবি

সবার জন্য বৈষম্যহীন নগর, ঢাকা নগরের ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব আবাসন বাসস্থান নিশ্চিত করা, পণ্যের দাম কমানোসহ ১১টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জাল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)-এর সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে আসা সমন্বয়করা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নগরায়ন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং নগরীগুলো অর্থনীতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু এবং জাতির সামাজিক কাঠামো তৈরির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি, নগর এলাকায় বৈষম্য, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং সামাজিক বঞ্চনা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্যই হলো সমাজ থেকে সকল প্রকার বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করা।’
তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা করে বলেন, ‘আমাদের সকলের প্রত্যাশা বাংলাদেশের আন্তবর্তী সরকার শহর ও নগরের ধনী ও বস্তিবাসীর মধ্যে যে অন্যায্য বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর করবে এবং সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন এবং অন্তভূক্তিমূলক নগর এবং শহর তৈরি করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যহীন নগরের জন্য নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের সুনির্দিষ্ট ১১টি দাবি তুলে ধরা হয়। তাহলো-
১. ঢাকা নগরের ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব আবাসন বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
২. বস্তিবাসীদের আবাসন সংকট পূরণের জন্য নেয়া ভাষানটেকের অসমাপ্ত বিল্ডিংগুলো সম্পন্ন করে তা প্রকৃত বস্তিবাসীদের জন্য বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
৩. নগরের যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় নগরের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে।
৪ . নগরের ধনী, গরীব, বস্তিবাসী সবার জন্য পানি, বিদুৎ, জ্বালানির সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। .
৫. গ্রাম ও নগরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি (সোস্যাল সেফটিনেট) বৈষম্য দূর করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
৬. বস্তিবাসীকে সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে নগর দরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে আয়বর্ধনমূলক কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ঢাকা শহরের খাল, প্রাকৃতিক জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, শরীরচর্চা স্থান নগরের সকল শ্রেনি পেশার মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. নগরের সব রকম দূষণ বন্ধ করে সবার জন্য পরিবেশ সম্মত একটি বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
৯. নগর দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, ভর্তুকীমূল্যে পণ্য কেনার জন্য রেশনকার্ড প্রদান করতে হবে।
১০. বস্তিবাসীকে নগরের জলবায়ু সংকট যেমন বন্যা, জলবদ্ধতা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, তাপদাহ থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১১. নগরে নারী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধিসহ সবার জন্য একটি সুশৃঙ্খল যাতায়াত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা তৈরীর উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মিহির বিশ্বাস, খন্দকার রেবেকা সানইয়াত, বারসিকের নির্বাহী পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টপম্বর/এমআই/এজে)

মন্তব্য করুন