মাদক, অশ্লীলতা ও বখাটের অভয়ারণ্য আলফাডাঙ্গার স্বপ্ননগর
ভূমিহীন, আশ্রয়হীন ও অসহায় মানুষদের বসবাসের জন্য নির্মিত স্বপ্ননগর এখন দুঃস্বপ্নে সয়লাব। মদ, গাঁজা, ইয়াবা সেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই প্রকল্প এলাকা। উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা চলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। সেইসঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কথিত কফি হাউজ নোংরামিতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
বলা হচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর গ্রামের চরাঞ্চলের আশ্রয়হীন প্রকল্প স্বপ্ননগরের কথা। সরকারি বরাদ্দকৃত এই আবাসনের মানুষেরা বহিরাগত বখাটেদের মাদক সেবন ও উৎপাতে অতিষ্ঠ। মধুমতি নদী তীরবর্তী এই প্রকল্পটিতে সরকারিভাবে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে ধীরে ধীরে জনপদে রূপ নিয়েছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় ও বাইরের দর্শনার্থীদের আগমনে জায়গাটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় কাতলাসুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বপ্ননগর তৈরি হওয়ার পর এখানকার মানুষ শান্তিতেই ছিল। কিন্তু বহিরাগতদের আনাগোনায় বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। দূর-দূরান্তের অচেনা- অজানা লোকেরা এসে এই স্বপ্ননগরে মাদক সেবন, মারামারি ও নারীসঙ্গসহ নানা অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। এতে আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য ও সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
একই গ্রামের বাসিন্দা মহাব্বত মোল্যা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মোটরসাইকেল চেপে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসে। উদোম ঘোরাঘুরি এবং কথিত কফি হাউজে বিরামহীন আড্ডায় মেতে থাকে তারা। মাদক সেবনও চলে দেদার। সেইসঙ্গে চলে অনৈতিক কার্যকলাপ।’
জানা যায়, স্বপ্ননগরে ঘুরতে আসাদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। চালচলন, কথাবার্তায় লাজলজ্জা ও ভয়ডরহীন একটা প্রজন্ম এখানকার নিয়মিত কাস্টমার। এমন বিস্তর অভিযোগ এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, সন্ধ্যার পরে এই বিস্তীর্ণ এলাকার যেখান-সেখানে চলে মাদক সেবন। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় একপ্রকার বাধাহীনভাবে চলে অনৈতিক কার্যকলাপ। নির্ভয়ে চলে গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবনের রমরমা আসর।
স্বপনগরের বাসিন্দারা হতদরিদ্র হওয়ায় এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। প্রেমিক-প্রেমিকা বা যুগল কেউ ঘুরতে এলে বিশেষ নজরে রাখে একটি চক্র। সন্ধ্যার পর পরই যুগল দর্শনার্থীদের আটকে ব্ল্যাকমেইল করে নগদ অর্থ, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। স্থানীয় ভাষায়, এই হয়রানি ও বিড়ম্বনার নাম ‘কট’।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ২টায় বখাটেদের উৎপাতের শিকার হন পার্শ্ববর্তী কুচিয়াগ্রামের শাকিব নামে এক তরুণ ও তার বান্ধবী। এ সময় বখাটের ছোড়া গুলিতে আহত হন হাফিজুর রহমান ও খাইরুল ইসলাম নামে দুই তরুণ।
গোলাগুলির ওই ঘটনায় সামিউল ইসলাম অপি ও পৈাচ্য নামে দুজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। অপ্রীতিকর এ ঘটনায় এখনো আতঙ্কে দিন কাটছে কাতলাসুর ও আশপাশের মানুষদের। ভীতির সঞ্চার হয়েছে তাদের মাঝে।
স্বপ্ননগরে ঘুরতে আসে তরুণদের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত আচরণ ও মাদক সেবনের বিষয়ে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, নৈতিকতার অবক্ষয়, সামাজিক মূল্যবোধের স্খলন ও অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে অপরাধে জড়াচ্ছে তরুণরা। সেইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিপদগামী ট্রেন্ডিং প্রভাবিত করছে বর্তমান প্রজন্মকে। যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
সামাজিক বিচ্যুতি ও অপরাধ থেকে উত্তরণে ধর্মীয় বিধিবিধান মান্য ও অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি আরও বেশি যত্নবান ও সজাগ দৃষ্টি রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রবীর কুমার বিশ্বাস।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাইরের লোকজন এই এলাকার সুনাম নষ্ট করছে। প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে সুফল আসবে। আমরা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
সরকারি এই আবাসন প্রকল্প এলাকার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ২নং গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গোলাগুলির খবর শুনেছি। সেখানকার বিশৃঙ্খলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা পেলে আমরা পদক্ষেপ নেব।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াসমীন বলেন, ‘স্বপ্ননগরের বিশৃঙ্খলা ও মাদক সেবনসহ অন্যান্য বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এজে)