২৫১ প্রতিমা নিয়ে আলোচনায় আলফাডাঙ্গার হরিমন্দির

মাত্র সপ্তাহ দুই পরেই শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে মৃৎ কারিগরদের এখন হাঁফ ছাড়ার ফুসরত নেই। তাদের দিন-রাত একাকার দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, অসুরের মূর্তি তৈরির ব্যস্ততায়। সুনিপুণ হাতের ছোঁয়া ও নান্দনিকতার মিশেলে প্রতিমায় তুলে দিচ্ছেন সুচারু অবয়ব।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমার কাঠামো-অবয়ব গড়ার কাজ শেষ হয়েছে। হরিমন্দিরসহ উপজেলার সব মন্দিরে প্রতিমা কারিগররা রং-তুলি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলছে প্রতিমার চূড়ান্ত সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।
আলফাডাঙ্গা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শ্রীশ্রী হরি মন্দিরে সনাতন ধর্মের চার যুগের দেব-দেবীদের জীবনকাহিনী নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ২৫১টি প্রতিমার বিশাল প্রদর্শনী। হরিমন্দিরের এত বড় মণ্ডপের আয়োজন শুধু উপজেলাই নয় ফরিদপুর জেলায় সাড়া ফেলেছে। প্রতিমা গড়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে কারিগর এনেছেন হরিমন্দির পূজা উৎযাপন কমিটি৷
হরিমন্দিরের ভারত থেকে আসা মৃৎশিল্পী অনিল কুমার পালের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। তিনি ছয় মাসের (প্রতিমা তৈরির) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এই দক্ষ প্রতিমা কারিগর বলেন, ‘দেব-দেবীর মূর্তি তৈরির সাথে আমাদের অনুভূতি, ভক্তি ও শ্রদ্ধা জড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণ প্রতিমা তৈরির পরে যখন মণ্ডপে বসানো হয়, তখন অন্তরে প্রশান্তির অস্তিত্ব টের পাই। দর্শনার্থীরা যখন প্রশংসা করে তখন মনটা আনন্দ-খুশিতে ভরে যায়।‘
আলফাডাঙ্গা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এ উপজেলায় এবার ৪১টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌরসভায় ১১টি, গোপালপুর ইউনিয়নে ১টি, বুড়াইচ ইউনিয়নে ২টি, টগরবন্দ ইউনিয়নে ৭টি, আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নে ৭টি, বানা ইউনিয়নে ৭টি ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নে ৬টি পূজা মণ্ডব সাজানো হচ্ছে।
আলফাডাঙ্গা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কুন্ডু বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমাদের পৌরসভার হরিমন্দিরে জেলার সবচেয়ে বড় প্রতিমা প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।’ দুর্গাপূজায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রবীর কুমার বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটা মণ্ডপে আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিরাপত্তা বিধানে কাজ করবেন। এ ছাড়া নিজস্ব ভলান্টিয়ার বাহিনী তো থাকবেই।’
প্রবীর কুমার বিশ্বাস আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ‘আমাদের আলফাডাঙ্গা একটি ছোট্ট উপজেলা। এখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অত্যন্ত চমৎকার। পারস্পারিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনের ভিত্তিতে এখানে আমরা বাস করি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে অদ্যাবধি আলফাডাঙ্গায় কোনো সাম্প্রদায়ীক অঘটন ঘটেনি। আমরা আশা করছি এবারও আনন্দঘন পরিবেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলেমিশে এই উৎসব পালন করব।’
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আলফাডাঙ্গার শান্তিপ্রিয় মানুষ ধর্ম-বর্ণ বিভেদ ভুলে মিলেমিশে একসাথে বাস করে। সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন রয়েছে এখানে। আশা করি বরাবরের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা পালিত হবে।’
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। প্রশাসনের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর রবিবার (বিজয় দশমীর) বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
দেবী দুর্গতীনাশিনীর আগমনে সব অশুভ অপশক্তির বিনাশ হয়ে, সত্য সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশ অটুট থাকবে, শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে এমন প্রত্যাশা আলফাডাঙ্গা উপজেলার সনাতন ধর্মের অনুসারীদের।
(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন