শ্রীপুরে বিএনপি নেতার নির্যাতনে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে বাঁশবাড়ি এলাকায় চুরির অপবাদে শরীরে গরম পানি ঢেলে এক রাজমিস্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের পর ওই রাজমিস্ত্রি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
অভিযুক্ত মো. কামরুল হাসান লিটন (৪৫) উপজেলার শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ১৬ সেপ্টেম্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
নিহত রাজমিস্ত্রীর নাম মো. ইসরাফিল (২৪)। তিনি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসিরের ছেলে এবং পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ভুক্তভোগীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতা ও তার লোকজন। এরপর শৈলাট মেডিকেল মোড় স্কুলমাঠে নিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়।
এরপর অভিযুক্তরা তার কোমরের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। তাতে পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী রাজমিস্ত্রির বাবা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে তার কাছ থেকে বিএনপির নেতা জোরপূর্বক নন জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে গুরুতর আহত ছেলেকে তুলে দেয় এবং এ বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা।
ভুক্তভোগী রাজমিস্ত্রির বাবা মো. নাসির বলেন, ‘আমার ছেলে সারা দিন রাজমিস্ত্রি কাজ করে। বাসায় সারা রাত ঘুমিয়ে থেকে সকালে ওঠার পরপর অভিযুক্তরা এসে তাকে ডেকে নিয়ে স্কুল মাঠে নির্যাতন করে। আমি এমন অমানবিক নির্যাতনের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান তিনি। মারধরের পর ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ছেলে মারা গেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাজমিস্ত্রির মৃত্যুর পর থেকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা কামরুল হাসান লিটন পলাতক রয়েছেন। তবে মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জানানা, ‘আমি কাউকে মারধর বা নির্যাতন করিনি।’
মেডিকেল মোড় মসজিদে নববী এর সভাপতি সাহিদুজ্জামান জলিল বলেন, এলাকায় প্রায় সময় মসজিদ ও বাসাবাড়ির পাম্প চুরি হচ্ছে। স্থানীয়রা ওই ছেলেকে আটক করছিল।
এরপর মসজিদের চুরি হওয়া আইপিএসের ব্যাটারি দিবে বলে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে নির্যাতনের বিষয়টি তার জানা নেই। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, ইসরাফিল নামের একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত করা হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে পূর্বের দেওয়া লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/পিএস)

মন্তব্য করুন