ঢাবিকে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে নিরলস কাজ করছেন ভিসি নিয়াজ আহমেদ খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে নিয়োগের মাত্র এক মাসেই শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে গত ২৬ আগস্ট দেশের এই প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩০তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই শিক্ষক।
জানা গেছে, জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, নতুন ভিসির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এরইমধ্যে তা কেটে গেছে। আবার ক্যাম্পাস চিরচেনা রূপে ফিরেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসকে উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে একগাদা সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে কার্যকর করেছেন ভিসি নিয়াজ আহমেদ খান।
দায়িত্ব নিয়েই নিয়াজ আহমেদ খান ঢাবির প্রতিটি আবাসিক হল পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল আালোচিত আবাসিক হলে গণরুম বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেন।
এর ফলশ্রুতিতে আবাসিক হলগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট দেওয়া শুরু হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান। পাশাপাশি ২০১৮-১৯ এর আগের শিক্ষাবর্ষগুলোর শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বিনা নোটিশে বিভিন্ন হল ও ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলছেন। তাদের সর্বাঙ্গীন খোঁজখবর নিচ্ছেন। নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট নিরসনে জন্য নতুন আবাসিক হল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্টে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংসতা তদন্তে সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। সম্প্রতি ফজলুল হক মুসলিম হলে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বহিষ্কারের পাশাপাশি হলটির প্রভোস্টকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন।
১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া নিয়াজ আহমেদ খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ওই বিভাগে তার ব্যাচে তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকেও বোর্ডে তিনি ফার্স্ট ডিভিশনে ফার্স্ট ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন নিয়াজ আহমেদ খান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং গবেষণাগ্রন্থে ১৬০টিরও বেশি নিবন্ধ এবং অধ্যায় রচনায় অবদান রেখেছেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি এবং এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করেছেন অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে অর্জিত একাডেমিক এবং অনুশীলন উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার একটি সমৃদ্ধ মিশ্রণ প্রতিফলিত হয় তার কর্মজীবনে।
তিনি বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল ফরেস্ট কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশগত নেটওয়ার্ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজের বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে নিয়াজ আহমেদ খানের।
ইউএনডিপি-বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর; বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ (আরইটিএ ৫৯০০); এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), সাউথ এশিয়ান ফেলো, কুইন এলিজাবেথ হাউস, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশিষ্ট ভিজিটিং গবেষক; পিকেএসএফের ব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) ডিস্টিংগুইশড ভিজিটিং প্রফেসর তার পূর্ববর্তী উল্লেখযোগ্য কাজ।
ড. নিয়াজ আহমেদ খান নিয়মিতভাবে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত উচ্চ প্যানেলযুক্ত সরকার এবং নাগরিক সমাজ কমিটিতে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের প্রধান জাতীয় (বেসামরিক ও সামরিক) প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসোর্স পার্সন এবং একাডেমিক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন।
এছাড়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র একাডেমিক অ্যাডভাইজার কাজের অভিজ্ঞতাও তার ঝুলিতে।
(ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/ডিএম)

মন্তব্য করুন