কুমিল্লায় সবজির বাজার লাগামছাড়া, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

‘মাছ-মাংস ধনীরা খায়, শাক-পাতা-ডিম গরিবের খাবার’— এই বচনের প্রচলন বাঙালি সমাজে বহুকাল থেকে। তবে সম্প্রতি সবকিছু যেন পাল্টে যাচ্ছে। গরিবের সবজি পাতারও যেন নবাবি হাল। মাছ-মাংসের দাম তো আছেই তার সাথে পাল্লা দিয়ে সবজিও যেন নাম লিখাতে চাইছে বড়লোকের খাবারের তালিকায়। যা সাধারণের জীবন রীতিমতো বিষিয়ে তুলেছে। বাজার ঘুরেও কেনার সাহস মিলছে না সবজি কিংবা মাছ-মাংস। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁপে ছাড়া বাজারে প্রচলিত সবধরনের সবজির দামই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে নাভিশ্বাস তুলছেন ক্রেতারা। সবজি না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। এর মধ্যে লাগামছাড়া দামে শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ টাকায়, টমেটো ২৮০ ও বেগুন জাত ভেদে ১৬০-১৯০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই সবজি কেনার ক্ষেত্রে কেজি থেকে নেমেছেন গ্রামে। ২৫০ বা ৫০০ গ্রাম ওজনে সবজি কিনছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।
এদিকে, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোতে করলা, বেগুন, পটল, কাঁচা পেঁপে, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া শীতের আগাম সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শিম, টমেটো, লাউ, গাজর, বেগুন এবং ধনেপাতাও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে শতকরা ৯৭ শতাংশের দামই ১০০ টাকা কেজি চাওয়া হচ্ছে। শুধু কাঁচা পেঁপের দাম কেজি ৪০-৪৫ টাকা।
আর সর্বোচ্চ দাম হাঁকা হচ্ছে শিম, গাজর, বেগুন, ফুলকপি ও পাতাকপির। আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি শিম ৩০০-৩২০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন ফুলকপি আকারভেদে ১০০-১১০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ১৬০-১৯০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঝিঙে ১০০ টাকা, টমেটো ৩০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিন বৃষ্টির কারণেই সবজির দাম হঠাৎ বেড়েছে। তবে বৃষ্টি কমলে বাজারে সবজি সরবরাহ বাড়বে তখন দাম আবার হাতের নাগালে চলে আসবে।
আবার অনেকেই বলছেন, উত্তরবঙ্গে বন্যার কারণে সবজির বাজারে বাড়তি চাপ পড়েছে।ক্রেতারা বলছেন, সবজির ঊর্ধ্বমুখী বাজারে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। শিগগিরই বাজার তদারকি বাড়িয়ে সবজির সরবরাহ বাড়াতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মনে করছেন অনেকে।
নগরীর রাণীর বাজারে পরিবারের জন্য বাজার করতে আসা পলাশ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই-তিনটা সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অন্যান্য বাজার কিভাবে করবো। এ বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি তদারকি করা প্রয়োজন। বন্যা-বৃষ্টি হলে যেন সবজি বা নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে না যায় এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
জুনাইদ আবরার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সবজির যে আকারে দাম বেড়েছে কেনার মতো উপায় নেই। ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। না খেয়ে থাকতে হবে।
এছাড়া আগে থেকেই বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নিত্যপণ্য। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১০৫-১১৫ টাকা, দেশি রসুন ২১০-২২০ টাকা, আদা ২৮০-৩০০ টাকা, শুকনো দেশি লাল মরিচ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রেজা শাহবাজ হাদী বলেন, ‘হঠাৎ সবজির এত দাম বাড়ার কারণ আমরা এই মূহুর্তে বলতে পারছি না। আমরা ট্রাস্কফোর্স নিয়ে বের হয়ে দাম বৃদ্ধির কারণটি খতিয়ে দেখবো। শীতকালীন আগাম সবজির দাম বাড়তি থাকবে কিন্তু এত বাড়তি থাকার কথা নয়। শিগগিরই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লার পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিম, মুরগি, সবজি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রয়, বিক্রয়মূল্য, মূল্য তালিকা সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করেছি। ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তারা সহ ছাত্র প্রতিনিধিও এই কমিটিতে রয়েছেন। আজ থেকে বাজার মনিটরিং টিম বাজার পরিদর্শনে কাজ করা শুরু করবে। আশা করছি খুব দ্রুতই বাজারমূল্য একটি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’
(ঢাকা টাইমস/১০অক্টোবর/এসএ)

মন্তব্য করুন