স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আরও সক্রিয় হওয়া উচিৎ ছিল: সারজিস আলম

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আরও সক্রিয় হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে সক্রিয় উপদেষ্টা হওয়া উচিৎ ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার, যিনি মন্ত্রণালয়ে অফিস না করে হাসপাতালে করবেন এবং দৌড়ে বেড়াবেন প্রতিটি হাসপাতালে। কিন্তু আমরা তাকে তেমন অ্যাকটিভ দেখতে পাই না।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের (আহতদের) যে জিনিসগুলো সেবার জন্য দেওয়া হয়, এই জিনিসগুলোর মধ্যে যেখানে বেডপ্যাক দেওয়ার কথা সেখানে পেপার দেওয়া হয়েছে। যে জায়গায় গুলি লেগেছে সেই জায়গায় পেপার দেওয়া মানে তো সেখানে ইনফেকশন করবে। পেপার তো একটা ময়লা জিনিস, এই পেপার তো দোকান থেকে কেজি দরে কিনে নিয়ে আসা পেপার। আরেকটা অভিযোগ এসেছে এখানকার পরিবেশ, এখানে নতুন বিল্ডিং আছে সেখানকার পরিবেশ ভাল। কিন্তু আজ থেকে কয়েক বছর আগে কিছু রুম পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই রুমগুলোতে রোগী রাখা হয়েছে। এখন তারা যদি বলে এখানে রোগীর আধিক্য বেড়েছে বলে পরিত্যক্ত রুমে রাখা হবে, যেগুলো গোডাউনের চেয়ে খারাপ। সেটাতো যৌক্তিক হতে পারে না। যে রুমগুলো দুই জনের, যেগুলো ভালো রয়েছে সেখানে আরেকটা বেডপ্যাক আপনি লাগান। সেটা না করে তারা পরিত্যক্ত রুমগুলোতে রেখেছেন। রোগী ভালো হওয়ার জন্য ভালো পরিবেশ দরকার। সেই পরিবেশ যদি নরমাল পরিবেশের চেয়ে খারাপ হয় তাহলে রোগী তো ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপের দিকে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আসছি এই খবর শুনে দৌড়াদৌড়ি করে ফ্লোর মোছা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় স্যাভলন দেওয়া হচ্ছে, ক্লিন করা হচ্ছে। এগুলো তো এক/দুই দিনের জন্য আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো প্রতিদিন আসব না। এটা করতে হবে ৩৬৫ দিনের জন্য। এই রোগীগুলো তো কারও কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। আমার মাথায় এটা ঢোকে না এই জিনিসগুলো যারা করে তাদের কী পরিবার নেই? তারা কি তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে অন্য হসপিটালে যায় না? তারা দেখে না যারা হসপিটালে যায় তারা অসহায় অবস্থায় যায়। তাদের জিম্মি করে এই রকম ব্যবহার করার তো কোনো মানে হয় না। বিশেষ করে স্টাফদের, যারা রুট পর্যায়ে কাজ করে তাদের ব্যবহার একেবারে খারাপ। এই কথাটা রোগীদের পক্ষ থেকে এসেছে তাদের ব্যবহার খারাপ। সবচেয়ে বড় কথা হলো রোগী ভালো ব্যবহারে অনেকটা ভালো হয়ে যায়। তারা যদি এই জায়গাটার দায়বদ্ধতা না বোঝে, তাদের কাজ কী এই কথাটা যদি না বোঝে তাহলে তো তাদের কাজ করার কেো প্রয়োজন নাই। একটা রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করার মানসিকতা যদি না থাকে তাহলে এখানে চাকরি করার তো কোনো দরকার নাই, আপনারা অন্য চাকরি করেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু সিআরপি না বাংলাদেশের যে কোনো হসপিটালেই যেদিন কেউ পরিদর্শনে আসবে সেদিন ধুয়েমুছে চকচকে করা হয়। আমরা তো মাত্র ত্রিশ মিনিটের নোটিশে এসেছি, আমাদের সামনেও তারা ধোয়ামোছা শুরু করেছে। যা আমাদের চোখে পরেছে। আমরা আসব এ জন্য এটা করা হবে তা উচিৎ না। এটা সবসময় করা উচিৎ। আমাদের কাছে আরও বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। রোগীদের যে প্রত্যাশা সেটা হলো একদিন কিংবা দুইদিন পর হোক ডাক্তার রোগীদের দেখে আসবে। সেই জায়গায় ১৫ দিনে একজন ডাক্তারের সাথে তারা কথা বলতে পেরেছে। এখানে বেশীরভাগ রোগী প্যারালাইজড, হাতের সেন্স নাই পায়ের সেন্স নাই। সেই রোগীকে কেন ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখাতে হবে। ডাক্তার বেডে বেডে এসে রোগীদের দেখবে না? আমরা তো হাসপাতালে হাসপাতালে এটাই দেখি। কিন্তু এখানে রোগীদেরই ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখাইতে হয়। আমাদের কাছে কয়েকটা পেশার মানুষের জন্য শ্রদ্ধার জায়গাটা অনেক ওপরে। এর মধ্যে শিক্ষক ও ডাক্তার আছেন। তাদের জায়গায় এমনটা দেখলে আমাদের নিজেদের মর্মাহত করে। মেডিসিনের জন্য স্টাফদের কাছে গিয়ে বার বার বলতে হয়। এবিষয়ে কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করেন। একবারে গিয়ে কখনও মেডিসিন পায় না। এইরকম সেনসেটিভ জায়গাগুলোতে এমনটা আমরা প্রত্যাশা করি না। সেটা আন্দোলনকারী হোক কিংবা সাধারণ রোগী। এটা তো আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নাই, আন্দোলনকারী বলে চিকিৎসা একরকম হবে আর সাধারণ রোগী বলে চিকিৎসা আলাদা হবে এটা প্রত্যাশা করি না। কারণ এই আন্দোলনকারী ভাই-বোনরাই একসময় সাধারণ হয়ে আসবে।
এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের হেলথ টিম এখানে আসবে৷ প্রশাসনের সাথে কথা বলবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রশাসনের সাথে কথা বলব। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সিআরপি যারা বাংলাদেশের দায়িত্বে আছেন তাদের সাথে আমরা কথা বলব। সিআরপি ঢাকা শাখার পরিবেশ খুবই ভালো। সকল সুযোগ সুবিধা খুবই ভালো। এটা ঢাকা থেকে একটু বাইরে, লোকজন কম আসে, মিডিয়ার ফোকাস কম। তাই যেমন ইচ্ছে তেমন করবে এটা হতে পারে না।
(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/ইএস)

মন্তব্য করুন