৮ বছর পর দেশে ফিরে এলাকায় গিয়ে কাঁদলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক
দীর্ঘ আট বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুক। দেশে ফেরার পর নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। এসময় তাকে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে দেখা যায়।
বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে এম ওসমান ফারুককে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। করিমগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এর আয়োজন করে করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠার পর দেশ ছেড়েছিলেন ওসমান ফারুক। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হলে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২৪ অক্টোবর পরিবারের সঙ্গে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন ৮৬ বছর বয়সী এই বিএনপি নেতা।
ড. ওসমান ফারুক কিশোরগঞ্জে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এ জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবদান আছে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওসমান ফারুক বলেন, ‘আমি চুরি করিনি, ডাকাতি করিনি, জেনেবুঝে কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। শুধু রাজনীতি করার কারণে আমাকে মিথ্যা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।’
সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে রাজনীতিতে এনেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তখন আমি আমেরিকায় বিশ্বব্যাংকে চাকরি করি। আমার চাকরির বেশ কয়েক বছর বাকি ছিল। শুধু বিএনপির রাজনীতির আদর্শের কারণেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কথায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে এসে রাজনীতিতে যোগ দিই। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমাকে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়। মন্ত্রী থাকাকালীন সর্বদাই উন্নয়নের চিন্তা করেছি। কিশোরগঞ্জ থেকে মন্ত্রী হলেও আমি শুধু নিজ জেলার উন্নয়ন করিনি। সারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হঠাৎ একদিন টিভিতে দেখি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের নালিশ করা হয়েছে। সে জন্য আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। বিষয়টি দেখে আমি হতবাক। যিনি টিভিতে এসব বলছেন, তিনিও আমার এলাকার লোক। আমার মতো মানুষের বিরুদ্ধে যদি এমন একটি ডাহা মিথ্যা অভিযোগ তুলে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর কী পরিমাণ অত্যাচার-নিপীড়ন হয়েছে, সেটা ভাবা যায়।’
করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি জালাল মোহাম্মদ গাউস, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাঈল মিয়া, আমিনুল ইসলাম, যুববিষয়ক সম্পাদক ও করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এরশাদ আহসান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দুলাল সিকদার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ড. ওসমান ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে হিসেবে যোগ দেন। তিনি সেখানে অপারেশন ও মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পর ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৭০ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/ইএস)
মন্তব্য করুন