দুই শ্রমিককে মারধর করে লবণ-মরিচ ছিটিয়ে নির্যাতন

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি অটোরিকশা চুরির অপবাদে দুই শ্রমিককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর চোখ-মুখে, শরীরে লবণ ও মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে অটোরিকশাচালক ফাইজুদ্দিন ও তার স্ত্রী লিমার বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর আগে মঙ্গলবার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।
নির্যাতিত দুই শ্রমিক স্থানীয় সাইটালিয়া বাজার এলাকার ইরেক্টস্ পুলস অ্যান্ড স্ট্রাকচারস্ লিমিটেড কারখানায় চাকরি করেন। তাদের মধ্যে আলমগীর হোসেন (২৪) শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের আছিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি তার মামার বাড়িতে থেকে ওই কারখানায় কাজ করেন। অন্যজন মাইনুদ্দিন সোহেল (২৬) ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ভাতাদিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
নির্যাতনের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তারা আবদার গ্রামের ইউছুব আলীর ছেলে ফাইজ উদ্দিন, তার স্ত্রী লিমা আক্তার ও তাদের দুই মেয়ে।
দুই শ্রমিকের স্বজনেরা জানান, গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুর্বৃত্তরা ফাইজুদ্দিনের অটোরিকশার চালককে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয়। সন্দেহের বশে ধরে নিয়ে দুই শ্রমিককে নির্যাতন করেন ফাইজুদ্দিন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) নাইট ডিউটি শেষে সকাল ছয়টায় কারখানা থেকে বের হওয়ার পর আলমগীর ও সোহেলকে আটক করে ফাইজুদ্দিন ও তার সহযোগীরা। প্রথমে তাদের বেঁধে একটি অটোরিকশায় উঠিয়ে পাশের কাওরাইদ ইউনিয়নের বলদী ঘাটের দিকে নিয়ে যায় তারা। সেখানে একটি জঙ্গলে তাদের দুই ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। পরে আবদার গ্রামে ফাইজুদ্দিনের বাড়ির কাছে নিয়ে দুই শ্রমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে রড, রোল, বাঁশ, কাঠ দিয়ে পেটানো এবং ক্ষতস্থানে লবণ ও মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে দেয়। এদিন বেলা তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে তাদের নির্যাতন করে ফাইজুদ্দিন, তার স্ত্রী লিমা আক্তার ও তাদের দুই মেয়ে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একপর্যায়ে ফাইজুদ্দিনের স্ত্রী লিমা ওই দুই শ্রমিকের চোখে-মুখে সাদা কাগজে মরিচের গুঁড়া ও লবণ নিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
অটোরিকশার মালিক ফাইজুদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবার কারখানা শ্রমিক আলমগীর ও সোহেল আমার অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। পরে চালককে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে তার কাছ থেকে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চালক নিজে অটোরিকশা খোঁজার সময় দুই শ্রমিককে চিহ্নিত করে। পরে তাদের ধরে চুরির শাস্তি দেওয়া হয়।
ফাইজুদ্দিনের স্ত্রী লিমা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে চোরকে ধরলে গণপিটুনি দেয়। আমরা তো তাদের মেরে ফেলিনি। চুরির শাস্তি হিসেবে পিটিয়েছি।’
নির্যাতনের শিকার শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, নাইট ডিউটি করে সকাল ছয়টায় কারখানা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাইজুদ্দিন ও তার সহযোগীরা আমাকে আটক করে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে সারাদিন মারধর করেছে। আমি অটোরিকশা চুরি করি নাই এবং এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তারপরও তারা আমাকে নির্যাতন করেছে।’
নির্যাতনের শিকার অপর শ্রমিক মাইনুদ্দিন সোহেল বলেন, ‘সন্দেহ করে আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে। চুরির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পেটানোর পর তারা আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকাও নিয়েছে।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। নির্যাতনের শিকার দুই শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১নভেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন