ক্যানসার-ডায়াবেটিস থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ, মুলার গুণে সুস্থ থাকে হার্ট-কিডনিও
শহরে নেমেছে হালকা শীত। গ্রামে লেপ-কম্বল ছাড়া ঘুমানো দায়। এই সময়ের অত্যন্ত সহজলভ্য এবং পরিচিত একটি সবজি মুলা। প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বাজারে, দামেও বেশ সস্তা। ঝোল, সবজি, ভাজি ছাড়াও সালাদ হিসেবেও খাওয়া হয় এই মুলা। সবজিটির স্বাস্থ্যগুণও প্রচুর।
মুলা প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা শীতের মৌসুমে নিয়মিত মুলা খেতে পারেন। এতে নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ। ফলেট, ফাইবার, রাইবোফ্ল্যাবেন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ মুলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক একটি যৌগ, যা হার্ট ভালো রাখে।
তাই আর দেরি না করে ঝটপট মুলার চমকে দেওয়া কিছু গুণের কথা জেনে নিন। তারপর নিয়মিত পানে রাখুন এই সবজি। তাতেই পাল্টে যাবে আপনার শরীর-স্বাস্থ্যের হাল।
ডায়াবেটিস রোধ করে
মুলার মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম। এর ফলে, মুলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কখনোই বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া, রক্তে শর্করাকে মিশে যেতেও সাহায্য করে মুলা। ফলে রক্তে কখনোই সুগারের মাত্রা বেশি হয় না। উল্টা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে মুলা।
হার্টকে ভালো রাখে
মূলার তো অনেকরকম রঙ হয়। এই রঙের পেছনে কারণ হলো, মুলার মধ্যে থাকা অ্যান্থোকায়োনিন। এই অ্যান্থোকায়োনিন আসলে এক ধরনের ফ্ল্যাবোনয়েড। এই উপাদানটির বহু স্বাস্থ্যকর দিকও রয়েছে। যেমন বহু গবেষণায় উঠে এসেছে মুলার মাধ্যমে হার্টের যেকোনো সমস্যা দূর করা যায়। এছাড়াও এই উপাদানটি ক্যানসার এবং প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে।
ওজন কমাবে
মুলা এমন একটি উপাদান, যা অল্প খেলে পেট সম্পূর্ণভাবে ভরে যায়। অতিরিক্ত ক্যালরিও শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। মুলার মধ্যে জলীয় উপাদানের মাত্রা খুবই বেশি থাকে। একইসঙ্গে থাকে কার্বোহাইড্রেট এবং রাফেজ। যার ফলে, যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য মুলা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে
নানা কারণে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে। যেমন, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি লাগা, গলা ব্যথা বা ফুলে যাওয়া, ফুসফুসে সংক্রমণ, কোনো রকম অ্যালার্জি এবং আরও নানা কারণ থাকে। মুলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এই ধরনের সমস্যাগুলো সহজে শরীরকে কাবু করতে পারে না। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
মুলা শরীরে পটাসিয়াম সরবরাহ করে যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষত যদি আপনার হাই ব্লাড প্রেশার থাকে, তবে ডায়েটে মুলা রাখা দরকার।
জ্বরের প্রকোপ কমায়
শীতকালে অনেকেরই ঠান্ডা লেগে জ্বর আসে। এই ধরনের সমস্যা মূলত হয় ধুলা, ঠান্ডা বা বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য। এই সময় মুলার রস, বিট লবণ দিয়ে পান করলে জীবাণু এবং সংক্রমণ দূর হয়। ফলে জ্বর, সর্দি দূরে পালায়।
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
মুলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি প্রতিদিন সালাদ হিসেবে মুলা খান, তাদের দেহে কখনও ফাইবারের ঘাটতি থাকে না। ফাইবারের কারণে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে।
হজম সহজ করে
মুলা খাবারের হজমে সহায়তা করে। একই সঙ্গে এটি অ্যাসিডিটি, স্থূলত্ব, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং বমি বমিভাবের মতো সমস্যা নিরাময়েও সহায়ক।
ত্বক ভালো রাখে
যদি আপনি ঝলমলে ত্বক চান তবে প্রতিদিন মুলার রস খেতে পারেন। এতে ভিটামিন সি এবং ফসফরাস রয়েছে। যা ত্বককে ভালো রাখে।
প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে
মুলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আসলে মুলা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত উপাদান, তরল বর্জ্য হিসাবে বের করে দিতে পারে। এর ফলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মুত্রথলির যেকোনো সমস্যা কমতে শুরু করে। এছাড়াও মূত্রথলিতে প্রদাহজনিত সমস্যা এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালা অনুভূত হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
কিডনি সুস্থ রাখে
কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে মুলা। এটি শরীরের শরীরেরকে টক্সিন অপসারণেও সহায়তা করে। মুলা মানবদেহের অন্ত্রগুলো সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে
ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর জীবনে নেমে আসে বড়সড় বিপদের খাঁড়া। এমনকি রোগীর সঙ্গে তার পরিবারও ভুগতে থাকে। তাই যেনতেন প্রকারে এই অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে।
এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনারই অবহেলার সবজি মুলা। আসলে এই সবজিতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা কি না ক্যানসার প্রতিরোধ করার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই এই মরণব্যাধির ফাঁদ এড়াতে চাইলে নিয়মিত মুলা খান।
(ঢাকাটাইমস/০৬ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন