পাবনায় ইটভাটায় খাচ্ছে কাঠ, হুমকির মুখে পরিবেশ

‘পাবনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। কোনো নিয়মনীতি না মেনে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। বসতির পাশে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানবদেহে বাড়ছে নানা রকম রোগব্যাধি, বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের।
সরকারি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও পাবনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির ক্ষতি করে সংগ্রহ করা হচ্ছে ইট তৈরির মাটি। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি।
পাবনা জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ইটভাটা ১৮৭টি। কিন্তু বাস্তবে ইটভাটা আছে ২২৮টি। শুধু পাবনা সদর এবং সদরের সাথেই ঈশ্বরদীর কিছু অংশ মিলে রয়েছে ১৪০টি ইটভাটা।
ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী কামালপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, বিলকাদা, সাহাপুর এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। হাতেগোনা কয়েকটি ইটভাটা ছাড়া অধিকাংশ ভাটাতে নেই পরিবেশ, ফায়ার, ট্রেড, বিএসটিআইসহ কোনো ছাড়পত্র। তারা কম দামে ইট বিক্রি করলেও বেগ পেতে হচ্ছে বৈধ ইটভাটাগুলোর।
লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটা মালিকরা সরকারি নিয়মনীতি না মেনে ইচ্ছেমতো খড়ি, লাকড়ি ব্যবহার করে ইট পোড়ায় বলে তাদের উৎপাদন খরচ কম। তারা স্বল্পমূল্যে ইট উৎপাদন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এমন অভিযোগ করেন বৈধ ইটভাটার মালিকরা।
বৈধ ইটভাটার মালিকরা বলেন, কয়লা ও জ্বালানি তেলের দামসহ সবকিছুর খরচ বেড়েছে। এতে বেড়েছে ইট উৎপাদনের খরচ। দামের বেলায় প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে অবৈধ ইটভাটার সঙ্গে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিক্রি করা যাচ্ছে না বলে তেমন লাভ থাকছে না।
এ বিষয়ে অনুমোদনহীন ইটভাটা মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে অনুমোদনহীন এসব ইটভাটার কারণে পাবনায় লিচু, আম ও ধানের ফলন কমতে শুরু করেছে। পাবনা জেলায় প্রচুর পরিমাণ লিচু, আম ও ধান উৎপাদন করে এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জায়গায় রপ্তানি করা হয়।
ইটভাটার প্রভাব থেকে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টির আগেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, কৃষি জমির উপরের মাটি কেটে নিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ২০-৩০ বছর সময় লাগে। স্কুল-কলেজ ও বসতবাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না অবৈধ ভাটার মালিকরা। ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছড়াচ্ছে নানা রোগব্যাধি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ নদী, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ও মানুষের বসতির ক্ষতি করেই চলছে অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটাতে পরিবেশ, ফায়ার, ট্রেড, বিএসটিআইয়ের কোনো ছাড়পত্র নেই। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকজন অভিযানে আসে। কিন্তু কিছুই হয় না। বরং ভাটা মালিকরা হয়ে ওঠে আরও বেশি বেপরোয়া।
এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বা নজরদারি না বাড়ালে হুমকির মুখে পড়তে পারে মানুষের স্বাভাবিক জীবন এবং ঘটতে পারে পরিবেশ বিপর্যয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য দিতে কিছুদিন সময় চান পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক আব্দুল গফুর। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তো লোকবল কম। ১৮ জনের জায়গায় মাত্র ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট। তারপরও আমাদের অভিযান চলছে, জরিমানা করা হচ্ছে। অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যদি একটু মুভ করে তাহলে ভালো হয়।’
(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/মোআ/এসএ)

মন্তব্য করুন