হাসিনার যোগসাজশে ১৬০ জায়গায় বেড়া দিয়েছে ভারত: রিজভী

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার যোগসাজশে বাংলাদেশের সীমান্তের ১৬০টি জায়গায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। কেবল প্রায় ৮৫৭ কিলোমিটার বাকি আছে।’
সোমবার এক দোয়া মাহফিলে সীমান্তে ভারতীয়দের অপকর্মের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী রিকশাভ্যান-অটো রিকশাচালক শ্রমিক দল আয়োজিত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতকে যে সুবিধা দিয়েছে, দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যে কাজগুলো করা যায়, তা না করে জোর করে কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়েছে। আপনাদের বলে রাখি, শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সুবিধা দেওয়ার কারণে আমাদের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে ১৬০টি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে।’
‘আমাদের ৪ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। কেবল প্রায় ৮৫৭ কিলোমিটার বাকি আছে। আন্তর্জাতিক বিধিবিধান, দুই দেশের মধ্যেকার চুক্তি ও যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে সেটাও মানছে না। শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ সীমানার মধ্যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা হবে না, হতে গেলেও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করতে হবে, তা না মেনেই তারা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায়।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীর প্রতিরোধের সাথে যে জনগণ দাঁড়াতে পারে এই দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা তার আমলে করতে দেয়নি। ফ্যাসিজম আর তার নির্মমতা দিয়ে ভারতের সেবাদাস হয়ে কাজ করেছেন। উনি একটা কথা বলতেন যে, আমার দলের লোকদের মধ্যে অনেককে কেনা যায় কিন্তু শেখ হাসিনাকে কেনা যায় না। ভারত আপনাকে তো সবার আগে কিনেছে। কেনার কারণে আপনার নিজের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গৌরবকে আপনি পদদলিত করে ভারতকে অসম কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনার কোনো জবাবদিহিতা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জানত তাকে কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে না, তাই আমি যা করব যা বলব সেটাই শেষ কথা। এভাবে উনি পুলিশ কর্মকর্তাদের বাছাই করেছিলেন, র্যাব গড়ে তুলেছিলেন। এভাবেই বিচারবিভাগ গড়েছিলেন। তিনি যা চাইতেন, যেটা চিন্তা করতেন সেটাই বিচার বিভাগ থেকে প্রতিফলিত হতো।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে আমরা বিচারিক দুঃশাসনের নজির দেখেছি। আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কারণ ওই বিচারক জানত আমি যদি বেগম জিয়াকে সাজা দেই তাহলে আমার প্রমোশন হবে, তিনি রিটার্ড করার পরে হাইকোর্টের জজ হয়েছেন। অর্থাৎ ওই সাজা যে অন্যায় ছিল, হিংসায় প্রতিফলিত সেটি প্রমাণিত হয়েছে।’
‘আপিল করা হলে হাইকোর্টের বিচারক সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে দিলো। ওই হাইকোর্টের বিচারক এনায়েতুর রহিম জানতেন সাজা বাড়িয়ে দিলে শেখ হাসিনা তাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বানাবেন। তাই হয়েছে। শেখ হাসিনাও তাই করেছেন।’
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রিকশাভ্যান-অটো রিকশারচালকদের ভূমিকা ও আত্মত্যাগ এবং আহত হওয়ার বীরত্বের কথাও স্মরণ করেন রিজভী। এছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
আলমগীর হোসেন মন্টুর সভাপতিত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহীর কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবুর রহমান সুমন, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, আরিফুর রহমান তুষারসহ অটোরিকশা ভ্যান শ্রমিকরাও বক্তব্য দেন।
(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/জেবি/এজে)

মন্তব্য করুন