ভৈরবে ট্রেনে কাটা পড়ে গত বছর ৮৫ জনের মৃত্যু!

কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে থানাধীন রেলপথে গত বছর ট্রেনে কাটা পড়ে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫৮ জন, নারী ২৫ জন ও একজন করে শিশু-কিশোর। এদের অধিকাংশই অজ্ঞাতপরিচয়।
এসব মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় ৮৪টি অপমৃত্যু ও ১টি নিয়মিত মামলা হয়েছে বলে জানান ভৈরব রেলওয়ে থানার পুলিশ। যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ এসব মৃত্যুর কারণ।
ভৈরব রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্ভর পর্যন্ত নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৮৫ জন রেলে কাটা পড়ে মারা যায়। ভৈরব-টঙ্গী, ভৈরব-সরারচর রেলপথের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে তারা।
ভৈরব রেলওয়ে থানাধীন ভৈরব-টঙ্গী ৭০ কিলোমিটার ও ভৈরব-সরারচর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রেলপথ। ভৈরব রেলওয়ে থানার সীমানায় রয়েছে মোট ১৯টি রেলস্টেশন।
রেলসূত্র এই দুই পথে নিহতদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে উঠানামা, রেলপথ পারাপার, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রী, দুই বগীর সংযোগ স্থলে বসে যাতায়াত কিংবা ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলন্ত অবস্থায় যাতায়াতকালে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে্।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করলেও এসব স্টেশন থেকে বিশেষ করে লোকাল ও মেইল ট্রেনের অসংখ্য যাত্রী ট্রেনের বগী স্বল্পতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ করায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক যাত্রী অলসতা করে স্টেশনের রেললাইন পার হতে ওভার ব্রীজ ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা করেন যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাছাড়া ট্রেনের হাতলে ঝুলে আবার অনেকেই ট্রেনের ছাদেও ভ্রমণ করতেও দেখা যায়। অনেকে অসতর্ক অবস্থায় রেললাইনের পাশ দিয়ে চলাচল করেন।
এ ছাড়া ভৈরবে পাশাপাশি তিন সেতু দেখতে অনেক নারী-পুরুষ আসে। তাদের অনেকেই রেললাইনে দাড়িয়ে মোবাইলে ছবি তোলেন, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনেন ও কথা বলেন। এ সময় ট্রেন আসতে থাকলেও সেদিকে খেয়াল থাকে না তাদের। মূলত এসব কারণেই ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি হচ্ছে। এমন নির্মম মৃত্যু যা কখনো কারো কাম্য নয়।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবু ইউছুফ জানান, স্টেশনে যাত্রীদের সচেতন করতে সব সময় মাইকিং করা হয়। যাত্রীরা যেন রেললাইন পারাপারের সময় ওভারব্রীজ ব্যবহার করেন। চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠা-নামা না করেন- এসব ব্যাপারে স্টেশন কর্তৃপক্ষ সব সময়ই যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সতর্কতা মূলক প্রচারণা করে থাকে। তারপরও কিছু যাত্রী অসচেত অবস্থায় ঝুঁকিপুর্ণ ভ্রমণ করতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রাণ হারান।
এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাঈদ আহমেদ বলেন, চলন্ত ট্রেনে ওঠানামার চেষ্টা না করলে, ওভারব্রীজ ব্যবহার করা এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
রেল কর্তৃপক্ষের প্রচার-প্রচারণার ফলে আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে অপমৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানান স্টেশনমাস্টার। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ৮৫টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রেলওয়ে থানায় ৮৫ টি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ১টি নিয়মিত মামলায় রুপান্তরিত হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন