বাংলাদেশে জলবায়ু সংকটে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত: ইউনিসেফ

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:১৯| আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:২৯
অ- অ+
ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশ

২০২৪ সালে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলীর কারণে বাংলাদেশের তিন কোটি ৩০ লাখ শিশুসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে; জাতিসংঘের শিশু তহবিল- ইউনিসেফের এক বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে।

‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। এতে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলীর কারণে দফায় দফায় স্কুল বন্ধ দিতে হয়েছে।

সারাবিশ্বে ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ শিশুদের পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে, ফলে সারা দেশে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলে ছুটি দিতে বাধ্য হয়। মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বেশ কিছু জেলায় শিশুদের স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এরপর জুনে হয় তীব্র বন্যা, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আবারও শিশুদের শিক্ষার উপর। বন্যায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ছিলো ৭০ লাখ।

বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। তীব্র বন্যায় সেখানে ব্যাপকভাবে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের হিসেবে গত বছর ১২ মাসের মধ্যে জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে শিশুরা সব মিলিয়ে আট সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর – এই প্রত্যেক জেলায় শিশুরা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল দিবস হারিয়েছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, ‘চরম আবহাওয়াজতি ঘটনাবলীর তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা বার বার আঘাত হানার প্রবণতাও বেড়েছে। জলবায়ু সংকট এটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এগুলোর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের শিশুদের শিক্ষার ওপর এবং শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চরম তাপমাত্রা ও অন্যান্য জলবায়ুজনিত সংকট শুধু শিশুদের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত করে না, বরং এর কারনে শিশুদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বড় সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকলে শিশুদের- বিশেষ করে কন্যাশিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সুযোগ বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে শিশুবিবাহের ঝুঁকির হার ‘

ইউনিসেফের চিলড্রেন’স ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক) অনুযায়ী, জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকটের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। এসব নিয়মিত দুর্যোগের কারনে দেশে ‘শিখন দারিদ্র্য’ (দশ বছর বয়সেও সহজ কোন লেখা পড়তে না পারলে অথবা পড়ে বুঝতে না পারলে শিক্ষার্থীর সেই অবস্থাকে শিখন দারিদ্র্য বলে) দিন দিন আরও ব্যাপক হয়ে উঠছে; দেখা গেছে স্কুলগামী শিশুদের প্রতি দুইজনে একজন তার ক্লাশ অনুযায়ী যতটুকু পড়তে পারার কথা তা পারছে না, আবার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পরেও দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মৌলিক গণনা পারে না।

উপরন্তু, অনেক তুখোড় মেধাবী মেয়ে শিশুবিবাহের শিকার হয়ে স্কুল থেকে অকালে ঝড়ে পড়ছে। বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুবিবাহ রয়েছে, সেসব দেশের তালিকায় প্রথম ১০টির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এসব প্রভাব থেকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য স্কুল ও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিকল্পনার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং শিক্ষায় জলবায়ু-কেন্দ্রিক বিনিয়োগ লক্ষণীয়ভাবে কম। ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক জলবায়ু খাতে অর্থদানকারী প্রতিষ্ঠান ও দাতা গোষ্ঠী, বেসরকারি খাত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নীতি ও পরিকল্পনায় শিশুদের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:

• শিক্ষা খাতকে জলবায়ু সহনশীল করে তুলতে অর্থায়ন ত্বরাণ্বিত করা, যাতে জলবায়ুর অভিঘাত সামলে নিতে সক্ষম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পরীক্ষিত, টেকসই ও কার্যকরী সমাধানে বিনিয়োগ করা যায়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে হবে সব শিশুর জন্য নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

• জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনাসমূহ নিশ্চিত করা- যার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনালী ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন ৩.০ এবং ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা)- শিশুকেন্দ্রিক জরুরী সামাজিক সেবাসমূহ জোরদারকরণ যেমন শিক্ষা, আরও বেশি জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার ও দুর্যোগ-সহনশীল হয়ে গড়ে ওঠার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা।

• জলবায়ুকেন্দ্রিক নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে শিশু ও তরুণদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা।

রানা ফ্লাওয়ার্স আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুরা পরস্পর সম্পর্কিত দুটি সংকট- জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান শিখন দারিদ্র্য - এর সম্মুখভাগে রয়েছে। এর ফলে তাদের টিকে থাকা ও ভবিষ্যৎ দুটোই হুমকির মুখে পড়ছে। যেহেতু শিশুরা কথা বলছে এবং জলবায়ু সংকটের বিপর্যয়কর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে, সেহেতু নীতি-নির্ধারকদের অবশ্যই তাদের আহ্বানে মনোযোগ দিতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত নীতি ও অর্থায়ন পরিকল্পনাসমূহের কেন্দ্রে রাখতে হবে।’

সূত্র: ইউনিসেফ বাংলাদেশ

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইইউবিএটি-তে চীনা ভাষা কোর্সের উদ্বোধন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা