গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক: র্যাব বিলুপ্তির উদ্যোগ এবং পুতুলের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার আহ্বান উমামার

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির উদ্যোগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
শনিবার দুপুরে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তরুণ প্রতিনিধিদের বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
রাত ৩টা ১১টা মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন উমামা ফাতেমা।
পোস্টে উমামা উল্লেখ করেন, আজ (শনিবার) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তরুণ প্রতিনিধিদের বৈঠক আয়োজিত হয়। এ বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমার যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে প্রসঙ্গগুলো উত্থাপনের চেষ্টা করেছি তা হলো-
১. গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম, খুন, নির্যাতন চালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সাজেশন অনুযায়ী র্যাব ও এনটিএমসির মতো বাহিনীকে বন্ধ (Ban) করার উদ্যোগ গ্রহণ।
২. জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক তার সাম্প্রতিক প্রেস ব্রিফিং এ জানান, ইউএন রিপোর্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগের বিচার করা উচিত। একই সঙ্গে আরেকটি কথা বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের এই 'Cycle of Revenge' থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমার বক্তব্যে জাতিসংঘের International Criminal Court(ICC)-এ আওয়ামী লীগের গণহত্যাকে 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আবেদন জানাই। উত্তরে আন্তোনিও গুতেরেস জানান, যেহেতু বাংলাদেশ ICC-র স্টেট পার্টি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে (২০১১ সাল থেকে), তাই ICC-র অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ বাংলাদেশের আছে।
৩. শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে WHO এর দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। দুই বছর আগেই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। 'The Lancet' সাময়িকীতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মনোনয়নে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ। এই নিয়োগটি রিভিউ করার জন্য আমরা মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ে ব্যাপক অপতথ্যের ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগ এই স্যোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো ব্যবহার করে অনবরত গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমার বক্তব্যে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের গণহারে হেনস্তা ও অপদস্থ করার প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে এই Communication platform গুলোর তদারকির দুর্বলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করি। উদাহরণস্বরূপ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার মাঠ তৈরির জন্য দেশের মিলিটারি এজেন্সি ফেসবুক ব্যাপক অপতথ্য সার্কুলেট করে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার সম্মতি উৎপাদন করে। বাংলাদেশে গুজব বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ না হলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে ও নারী নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।
৫. বাংলাদেশে নারী নিরাপত্তা, একই সঙ্গে নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরি।
উমামা আরও জানান, বৈঠকে অন্যান্য অংশীজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলে আনেন, যার মধ্যে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে 'Truth & Reconciliation Commission' গঠন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সার্বিক চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতিসংঘের সহায়তা, জুলাই অভ্যুত্থানের সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়নাঘরের আলামত নষ্ট করা, ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ কর্তৃক বর্ডার হত্যা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে শেখ হাসিনা ও পলাতক খুনিদের দেশে ফেরত আনার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতার আবেদন, জাতিসংঘে হাসিনা পরিবারের কর্মরত সদস্যদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ, বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তাসহ অনেক প্রসঙ্গ উঠে আসে।
(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/এফএ)

মন্তব্য করুন