খাওয়ার আগে ও পরে রক্তে সুগারের মাত্রা কত থাকা স্বাস্থ্যকর, জেনে নিন

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৮
অ- অ+

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস এক নীরব ঘাতকের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে ভুগছেন এবং বহু মানুষ নিজের অজান্তেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। রক্তে ইনসুলিনের অভাবই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।

চিকিৎসকদের মতে, জীবনযাত্রায় খানিক পরবর্তন আনলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। তার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে করতে হবে শরীরচর্চা, ডায়েটে আনতে হবে বদল। যে কোনও শারীরিক সমস্যা যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়, তা হলে চিকিৎসা শুরু করতেও অনেক সুবিধা হয়। মাথা ঘোরা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়ার মতো কিছু প্রাথমিক লক্ষণ জানান দেয় ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

চিকিৎসকদের মতে, বিশেষ করে ৪০ বছরের পরে প্রত্যেকেরই নিয়মিত রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। খাবারের আগে ও পরে রক্তে চিনির মাত্রা কতটা থাকা উচিত, তা জানা থাকলে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করাও সহজ হয়।

খাওয়ার আগে ও পরে রক্তে সুগারের মাত্রা কত হওয়া উচিত? জানেন না অনেকেই। আপনি কি নিরাপদ সীমায় আছেন? নিজেই মেপে নিন।

অনেকেই বুঝতেও পারেন না যে তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। এই রোগ এড়াতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ৪০ বছর পেরলেই নিয়মিত রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করা জরুরি। যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আরও ঘন ঘন মনিটরিং প্রয়োজন। যদি খাবার আগে ও পরে রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থেকে যায়। তখন অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

HbA1c টেস্টে গত তিন মাসের গড় রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা জানা যায়। স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে HbA1c স্কোর ৫.৭-এর নিচে থাকে। প্রিডায়াবেটিসে এই স্কোর ৫.৭ থেকে ৬.৪ পর্যন্ত হয়। ৬.৫ বা তার বেশি হলে নিশ্চিত ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।

রক্তে চিনির স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত? চিকিৎসকদের মতে, সকালে খালি পেটে রক্তে চিনির মাত্রা ৯৯ mg/dl বা তার কম হওয়া উচিত। খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তে চিনির মাত্রা ১৪০ mg/dl-এর নিচে থাকলে সেটাই স্বাভাবিক ধরা হয়।

যদি এই মাত্রা সামান্য বেড়ে যায়, তাহলে সেটি প্রিডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। আর যদি খাওয়ার আগে চিনির মাত্রা ১২৬ mg/dl-এর বেশি ও খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পরে ২০০ mg/dl-এর বেশি হয়, তাহলে তা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। তবে একাধিক দিনের রেকর্ডে একই মাত্রা পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য HbA1c টেস্ট করা দরকার।

বয়স অনুসারে রক্তে শর্করার মাত্রা কত থাকা উচিত?

আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয় তবে খাবার খাওয়ার এক বা দুঘণ্টা পরে রক্তে শর্করার মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার হওয়া উচিত।

কেউ যদি খালি পেটে পরীক্ষা করেন তবে ৯৯ এমজি সুগার লেভেল থাকা স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হবে। এর থেকে বেশি সুগার হলে কিন্তু আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, অন্যথায় স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হতে পারে।

৪০ বছর বয়স হয়ে গেলে আপনাকে রক্ত ​​​​পরীক্ষা নিয়মিত করা উচিত কারণ এই বয়সে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি খুব বেশি। তাই সময় থাকতেই টেস্ট করিয়ে বুঝে নিতে হবে আপনাকে সতর্ক হতে হবে কিনা।

৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ব্যক্তিদের ফাস্টিং সুগারের মাত্রা ৯০ থেকে ১৩০ এমজি হওয়া উচিত, অন্যদিকে খাওয়ার পরে এই মাত্রা ১৪০ এমজি এর কম হওয়া উচিত এবং রাতের খাবারের পরে এটি ১৫০ এমজি পর্যন্ত হওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কী করবেন? চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ভুল খাওয়াদাওয়ার ফল। এড়াতে হলে— সময়মতো ঘুম ও ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস করুন। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

পরিবারে যদি ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো দরকার। আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান, তবে আজ থেকেই সচেতন হন।

(ঢাকাটাইমস/১৫ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণতন্ত্রের সমাজভূমি নির্মিত হলেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে: তারেক রহমান
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা