সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়, কেবল তার সঙ্গেই সম্পর্ক: আদালতকে মেঘনা আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:২৪| আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫৪
অ- অ+

সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানকে নিজের স্বামী দাবি করে সাবেকমিস আর্থ বাংলাদেশ’ মেঘনা আলম আদালতকে বলেছেন, “কেবল সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক। অন্য কারো সঙ্গে নয়।”

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুম মিয়ার আদালতে তোলা হলে বিচারকের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন মেঘনা।

এদিন সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা প্রতারণার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল রাতে মডেল মেঘনা আলমকে রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে এক মাসের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছিল।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ মেঘনাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো এবং তারসহযোগীসানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামের জনশক্তি রপ্তানিকারক কোম্পানির মালিক দেওয়ান সমিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী মামলায় মেঘনাকে গ্রেপ্তার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “এই আসামিরা অভিনব কৌশল অবলম্বন করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ অ্যাম্বাসিগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের হানি ট্র্যাপে ফেলে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য চক্র দাঁড় করিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতারণা করে আসছেন। সবশেষ সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন এবং তার কাছে মিলিয়ন ডলার দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসময় বিচারক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আছেন কি না জানতে চান। মেঘনা আদালতকে বলেন, কোনো আইনজীবী নেই। তিনি নিজেই কথা বলতে চান।

আদালত অনুমতি দিলে মেঘনা বলেন, “আমার নাম মেঘনা, মেঘলা নয়। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন যে কেউ চাইলে কি সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করতে পারে? আপনারা কি তার কাছে যেতে পারবেন?”

বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে মামলা সম্পর্কে কিছু বলার আছে কি না জানতে চান। এরপর মেঘনা বলেন, “আমাকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে কোনো আইনজীবী পাবেন না। বিষয়টি হলো, রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার একমাত্র সম্পর্ক, আর কারো সঙ্গে নয়।

তিনি দাবি করেন, “সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঈসা অভিযোগ করেন, আমি নাকি তার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি। এটা মোটেও সত্য না। বিষয়ে আমি ঈসার সঙ্গে কথা বলি। তাকে এসব তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলি। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি শফিকুরের সঙ্গে কথা বলি। এরপরেই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে।

দেওয়ান সমির রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে বলেন, “আমাকে মেঘনা আলমের বয়ফ্রেন্ড বলা হচ্ছে। এটা ভুল তথ্য, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সাধারণ একজন মানুষ। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমি মামলার এসব ঘটনার কিছুই জানি না৷

পরে আদালত তাদের দুজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সমির দেওয়ানকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় মেঘনা আলম সাংবাদিকদের দেখে বলতে থাকেন, “একমাত্র ঈসার সঙ্গে আমার সম্পর্ক, আর কারো সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমি ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।

মডেল মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। গত ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পূর্বে ফেসবুক লাইভে এসে মেঘনা অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। আটকের পরদিন ১০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাতে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ এবং আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন।

এদিকে মেঘনাকে আটকের পর তার রিমান্ড শুনানি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর আক্রোশের মুখে পড়েন ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক। পরে গত ১২ এপ্রিল ডিবি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

তাকে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কেন নয়তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “আমরা স্বীকার করছি গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি- মানে উনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের আলামত বা অভিযোগ নেই, সেটি নয়। সেটির ব্যাপারে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দাবি করেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারে বেআইনি কিছু করা হয়নি। তাকে যে আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটির প্রয়োগও দেশে নতুন নয়।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দেওয়ান সমিরকে গ্রেপ্তার করে ১২ এপ্রিল ভাটারা থানার এক প্রতারণার মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায়হানি ট্র্যাপিংয়েরমামলা দায়ের করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এলএম/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বোতল নিক্ষেপকারী শিক্ষার্থীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর, বাসায় দাওয়াত দিলেন তথ্য উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহাসংকটে পড়বে: মঞ্জু
শেরপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল যুবকের 
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষক নিহত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা