মাইন্ডফুলনেস থেরাপি নিরাময় করে হাজারো রোগ

মানুষের জীবনে স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। সাংসারিক চাপ, বয়সজনিত সমস্যা, অফিসের চাপ সবমিলিয়ে জর্জরিত অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ যত বাড়বে আপনার চেহারা, ত্বক এবং শরীরে তার ছাপ পড়বে। নিজেদের শরীর বা ত্বককে ভাল রাখার জন্য তাই মনকে রাখতে হবে চিন্তামুক্ত। স্ট্রেস বাড়লে বাড়তে থাকে অ্যাকনের সমস্যা, পাশাপাশি নির্জীব হয়ে পরে ত্বক, বলিরেখা স্পষ্ট হতে থাকে। আবার স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এইসব সমস্যাও অনেকটা কম থাকে।
মানসিক চাপ আপনার জীবন থেকে সহজে যাবে না। ফলে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে মানসিক চাপকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করার। শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার কৌশল। সেটি হল, ‘মাইন্ডফুলনেস’। নিজের প্রতি মনোনিবেশ করা। বর্তমান মুহূর্তটিকে গুরুত্ব দেওয়া। নিজের মনে ভাবনাচিন্তার যাতায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা। শুনে অবাক লাগলেও, এটি এক প্রকার স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
মাইন্ডফুলনেস হল মুহূর্তে বাঁচা। অর্থাৎ বর্তমানে আপনি যে কাজ করছেন সেই কাজেই নিজের মনকে পুরোপুরি নিমজ্জিত করা। ধরুন আপনি খাচ্ছেন। তাহলে আপনার মন যেন পুরোপুরি খাওয়ার দিকে থাকে। কী খাবার খাচ্ছেন, কোন পাত্রে খাচ্ছেন, খাবারের ঘ্রাণ, স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ সবকিছু অনুভব করুন। প্রত্যেকটা গ্রাস মুখে তোলা থেকে চিবোনো এমনকি স্বাদ নিয়ে খাবারটা গেলা সবটাই করুন সচেতনভাবে। এতে আপনার পঞ্চইন্দ্রিয় সজাগ থাকবে ফলে যতক্ষণ আপনি খাবেন অন্য কোনও দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা আপনার মাথায় আসতে পারবে না। সমস্ত কাজের ক্ষেত্রেই এই মাইন্ডফুলনেস অভ্যাস করতে পারলে সারাদিন আপনি নিজেকে অনেকটাই চিন্তামুক্ত বা চাপমুক্ত রাখতে পারবেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অ্যাকনে, একজিমা, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যায় অনেকটা ইতিবাচক ফল দিতে পারে। নিজের শরীর বা মনের জন্য যাই করুন না কেন সেটা নিয়মিত করতে হবে এবং দেখতে হবে কী ফল পাচ্ছেন। ধীরে ধীরে মাইন্ডফুলনেস অভ্যাসের প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়বে। একবার অভ্যাস করে ফেলতে পারলে মনের পাশাপাশি ঝরঝরে থাকবে শরীর, সতেজ থাকবে ত্বকও।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই অনুশীলনটি করতে হবে।
আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইন্ডফুলনেস সেন্টারের ডিরেক্টর এরিক লোউকস জানাচ্ছেন, শান্ত হয়ে বসে থেকে বর্তমান সময়টির কথা ভাবতে হবে। আর সেই সময়ে নিজেদের অনুভূতি আর ভাবনাগুলির প্রতি নির্দয় হলে চলবে না। নিজের প্রতি কৌতূহলী হতে হবে।
‘মাইন্ডফুলনেস’ আর ধ্যানের মধ্যে ফারাক রয়েছে। ধ্যান আওয়াজ বা শব্দ ছাড়া নিরিবিলিতে এক জায়গায় বসেই কেবল অনুশীলন করতে হয়, এ ক্ষেত্রে এ রকম কোনও নিয়ম নেই। যেখানে খুশি এই অভ্যাস করা যেতে পারে।
যেভাবে অনুশীলন করবেন মাইন্ডফুলনেস
শান্ত হয়ে বসে নিজের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে, বর্তমান সময়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই সময়ে বার বার মন উড়ে যেতে চাইবে। যাবতীয় কাজের কথা মনে পড়বে, কিন্তু আবার ধীরে ধীরে মনকে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে নিয়ে আসতে হবে। শুধু বসে বসেই এই অনুশীলন করতে হবে, তার মানে নেই। অন্যের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, হাঁটতে হাঁটতে, খেতে খেতে, প্রতিটি মুহূর্তে ‘মাইন্ডফুলনেস’-এর অভ্যাস চলতে পারে। মনকে রেখে দিতে হবে ওই সময়টির মধ্যে, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে।
ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক এবং মাইন্ডফুলনেস-প্রশিক্ষক ক্রিশ্চিয়েন উল্ফ বলছেন, ‘‘মুহূর্তের বাঁচা বা মুহূর্তের মধ্যে উপস্থিত থাকাকেই মাইন্ডফুলনেস বলে। কিন্তু এটি খুবই কঠিন হয়ে যায় অনেকের কাছে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, একই সময়ে একাধিক কাজ করা (মাল্টিটাস্কিং), ইত্যাদি এই অভ্যাসের প্রতিকূলতা। প্রথমত, মাল্টিটাস্কিং বা একই সময়ে একাধিক কাজ করা বন্ধ করে দিতে হবে। আসলে একই সঙ্গে দু’টি কাজে মনোনিবেশ করা অসম্ভব। মস্তিষ্ক আদপে কোনওটিতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারে না।’’
উল্ফের পরামর্শ, ‘‘অনুশীলনের সময়ে যেই মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার মন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে, তখনই বুঝবেন, আপনি ঠিক পথে এগোচ্ছেন। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তাঁর মন সরে গিয়েছে। বুঝতে পারাটাই আসল।’’
বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার এই অভ্যাস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার এই অভ্যাস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে। মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক চিকিৎসার ফলে উদ্বেগ কমতে দেখা গিয়েছে। অবসাদ মুক্তির ক্ষেত্রেও প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি, রক্তচাপ এবং অনিদ্রার সমস্যা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে এই অনুশীলনের।
চিকিৎসকের মতে, দীর্ঘস্থায়ী অসুখে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেস দারুণ কার্যকরী। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে এই অভ্যাসের।
(ঢাকাটাইমস/২৬ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন