এবার লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: জামায়াত আমির

আগামী বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি সবাইকে নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আজ শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন জামায়াত আমির।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি বলতে চাই আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? আরেকটা লড়াই হবে ইনশাআল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’
‘আমরা চাঁদা নেব না। দুর্নীতি করব না। আমরা চাঁদা নিতে দেব না, দুর্নীতিও সহ্য করব না।’ বলেন তিনি।
তার দল ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণ কেমন হবে তার একটা ধারণা দেন জামায়াত আমির। বলেন, ‘কোনো মন্ত্রী-এমপি সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো মন্ত্রী-এমপি ট্যাক্সবিহীন গাড়ি ব্যবহার করবে না। নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবে না। যদি কোনো এমপি বা মন্ত্রী নির্দিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষে বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের কাছে প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য থাকবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘২৪-এ আন্দোলনটা না হলে আজকে যারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলছেন তারা কোথায় থাকতেন? অতএব আসুন, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ যে নেয়ামত দিয়েছেন তা অবজ্ঞা না করি। অহংকারভরে অন্য দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। এগুলো যারা পরিহার করতে পারবেন না, বুঝতে হবে ফ্যাসিবাদের রূপ তাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে।’
বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন জামায়াতে ইসলামীর আমির। সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে ধরেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আবার উঠে দাঁড়ান। পরবর্তীতে মঞ্চে বসেই তিনি বক্তব্য আবার শুরু করেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আল্লাহ আমার হায়াত যতক্ষণ রেখেছেন তার এক মিনিটও বেশি থাকতে পারব না আমি। সুতরাং এটা নিয়ে আপনারা কেউ বিচলিত হবেন না।’ আল্লাহ যাতে তাকে শহীদি মৃত্যু দেন সেই কামনা করেন তিনি।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান ডা. শফিকুর রহমান। উদ্যানে প্রবেশের সময় রাস্তার দুই পাশে নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে স্লোগান দেন। আপ্লুত আমির হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তাকে হাসিমুখে দেখা গেছে।
দুপুর ২টার দিকে আমিরে জামায়াতের সভাপতিত্বে জাতীয় সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে বিকাল পাঁচটার পর বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান জামায়াত আমির। বক্তব্য দিতে গিয়ে দুই দফায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ৫টা ২০ মিনিটের দিকে প্রথমবার অসুস্থ হলে নিচে পড়ে যান তিনি। মঞ্চের অন্য নেতাদের সহযোগিতায় তিনি উঠে দাঁড়ান। এ সময় নেতারা তাকে ধরে রাখেন, তার খোলা মাথায় বাতাস করেন কেউ কেউ। পরে একজন তার মাথায় একটি টুপি পরিয়ে দেন।
৫টা ২৩ মিনিটে আবার বক্তব্য শুরু করেন জামায়াত আমির। ১ মিনিট বক্তব্য না দিতেই ফের অসুস্থ বোধ করেন তিনি। ক্ষণিকের জন্য বক্তৃতা বন্ধ করেন। এরপর ডান হাত দিয়ে বুক চেপে ধরেন এবং তাকে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় অন্য নেতারা চারপাশ থেকে তাকে ধরে বসিয়ে দেন।
জামাত আমির এ অবস্থায়ও বক্তৃতা চালিয়ে যেতে থাকেন। ‘আল্লাহু আকবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে বক্তৃতা শেষ করেন জামায়াত আমির।
সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করে জামায়াত। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করল দলটি।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন