উপদেষ্টা আসিফের বাবার গ্রেপ্তার চাইলেন কুমিল্লায় ট্রিপল হত্যার শিকারের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৩৬| আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:১৩
অ- অ+

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের রুমা আক্তার।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তিনি জানান, গত ৩ জুলাই উপদেষ্টার বাবার মদদে তার মা, ভাই ও বোনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন তাকেও কুপিয়ে জখম করে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। মামলা করলেও প্রধান আসামি উপদেষ্টার বাবার নাম বাদ দিয়ে পুলিশ ইচ্ছেমতো আসামিদের নাম দেয়। ঘটনার দিন ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়েও প্রতিকার পাননি বলেও অভিযোগ করেন রুমা আক্তার। উল্টো পুলিশের উপস্থিতিতে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। ঘটনার পর মামলা করা হলেও আসামিদের ভয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

রুমা বলেন, স্থানীয়ভাবেই আমাদের পরিবারের মানুষ বিশেষ করে আমার মা ছিলেন জনপ্রিয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে দুই বার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই সন্ত্রাসীরা আমার মা’কে বিজয়ী হতে দেয়নি। উল্টো জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তখন থেকেই হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন মামলাও দিয়ে আসছিল। এমনকি মানহানি করার জন্য মাদক এবং চাঁদাবাজির মতো মামলাতেও আমার মায়ের নাম দিয়ে বদনাম করার অপচেষ্টা করে আসছিল। কারণ নির্বাচিত না হলেও এলাকার মানুষ তাদের যেকোনো বিপদ-আপদ এবং বিচার সালিশের জন্য আমার মায়ের কাছেই আসতো, যা তাদের জন্য ছিল বড় ঈর্ষার কারণ।

যেভাবে মব তৈরি করে হত্যা করা হলো সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে রুমা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একদিন আগে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। মোবাইল চুরির কারণে একটা ছেলেকে আমাদের গ্রামের রবিউলের বাড়িতে মারধর করা হলে তার বাবা কোনোভাবেই তার ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে এসে সাহায্য চায়। তখন আমার মা সেখানে গিয়ে তাদের বলে, চোরটা যদি মরে যায় তাহলে তো আমরা আশপাশের সবাই ফেঁসে যাবো। হয় তাকে ছেড়ে দাও, না হয় পুলিশে দাও। এই কথা বলার সাথে সাথেই সেখানে থাকা বাচ্চু মেম্বার, রবি, শরিফ, বাছিদ, রফিক, আবু বক্কর, হারুনরা একযোগে বলে উঠে এই তুই চোরের পক্ষ ধরে আসছিস কেন? তুই নিজেও চোর এই বলে মায়ের ওপরও চড়াও হয়। আমার ভাই তা শুনে দৌড়ে গিয়ে আমার মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিকে সেই চোরকে সেখান থেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায় শরিফের লোকজন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে চোরের বাবা বাঙ্গরা বাজার থানায় অভিযোগ করলে বাচ্চু মেম্বার, রবিউল এবং শরিফের লোকজন আমার মা’কে সন্দেহ করে যে আমার মা তাকে সহায়তা করেছে। এই অভিযোগে দুই জুলাই রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামের তারু মিয়ার বাড়িতে শিমুল বিল্লাহ চেয়ারম্যান, আনু মেম্বারের উপস্থিতিতে বাচ্চু মেম্বার, রবিউল ও শরিফের আহ্বানে এক গোপন বৈঠক হয়। সেখানে প্রথমে আমার মা’কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, পরবর্তীতে আমরা বিচারপ্রার্থী হবো এই ভয়ে আমাদেরও শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বেশ কিছু টাকা লেনদেন হয় এবং কিছু খুনি ভাড়া করা হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়িত্ব নেয় শরিফ, আনু মেম্বার, বাছির, রকি, বাচ্চু মেম্বার, বাবুল, রবিউল, রবিউলের ছেলেরা। মামলার দায়িত্ব উপদেষ্টার বাবার কথা উল্লেখ করে তার পারমিশন আছে জানিয়ে শিমুল চেয়ারম্যান সব দেখার কথা বলেন। আর মিডিয়ার দায়িত্ব নেয় মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, আবু বক্কর, মোস্তফা, বিল্লাল। সারা রাত তারা প্রস্তুতি নেয় এবং পরের দিন ৩ জুলাই সকাল ৬টায় সন্ত্রাসী কায়দায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। কি নির্মমভাবে ওরা আমার চোখের সামনেই প্রথমে আমার মা, এরপর আমার ভাই ও বোনকে মেরে ফেলে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

রুমাকে ব্যাপকভাবে কোপানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মাথায় ৭২টি শেলাই আছে। শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আঘাত করেনি তারা। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। আল্লাহ তাঁর অলৌকিক শক্তি দিয়ে হয়তো বা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

রুমা বলেন, র‌্যাব কয়েকজন আসামি ধরলেও পরে আর কোনো আসামি ধরা হয়নি। তবে এই মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও থানা-পুলিশ তাতে কর্ণপাত করছে না। কারণ এই ঘটনায় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে বাদী করলেও আসামি সাজিয়েছে পুলিশ নিজেই। তাই প্রধান আসামি হিসেবে বিল্লাল মাস্টারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফের বাবার মদদে এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া শিমুল চেয়ারম্যানরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু আসামির জামিনও হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যেই ঘুরছেন এলাকায়। আসিফের বাবার প্রত্যক্ষ মদদে শিমুল চেয়ারম্যান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা শুনেছি এবং আমাদের বিশ্বাস শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টার ছেলে আসিফের বাসাতেই লুকিয়ে রেখেছেন তার বাবা।

কয়েকটি দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শিমুল চেয়ারম্যান এবং এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তিনি বলেন, মামলার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। সেই সময় পরিবারের তিনজনের হত্যাকাণ্ড এবং বাকিরাও আহত থাকায় আমার বোন রিক্তা আক্তার মামলায় আসামিদের নাম সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি এবং মামলার আসামি নির্ধারণে পুলিশ কর্তৃক হওয়ায় অপরাধীদের অনেকের নামই বাদ পড়েছে, যেগুলো নতুন করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

রুমা বলেন, আজকের পর থেকে আমাদের ওপর আর কোনো আঘাত আসলে এর জন্য সব দায় থাকবে উপদেষ্টা আসিফ ও তার বাবা বিল্লাল হোসেনের।

তিনি বলেন, আজকের পরে আমাদের কারো কোনো ভিন্ন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম বা কোথাও দেখলে আপনারা ধরে নিবেন, আসিফ মাহমুদের লোকজন জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে সেগুলো বলিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। যেমন আমাদের সৎ বাবা জুয়েল হাসানকে কয়েকদিন আগে আসিফ মাহমুদের লোকজন তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ভিন্ন বক্তব্য দিতে বাধ্য করিয়েছেন।

রুমা বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংবাদ সম্মেলনের পর তারা (খুনিরা) আমাদের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠবেন। সুতরাং এরপর আমাদের পরিবারের কারো ওপর কোনো আঘাত বা কারো কিছু হলে আপনারা সাক্ষী থাকবেন, এর সব দায় নিতে হবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের উদ্দেশে আমাদের একটাই কথা, আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন সবাইকেই হারিয়ে আমরা শেষ। আমাদের আর শেষ কইরেন না। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের একটু বাঁচতে দিন প্লিজ।

(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/এসএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে চাকরি পাওয়া ৯০ হাজার ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করছে সরকার
ঝিনাইদহে ৭ দিনব্যাপী বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন
রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা, ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ
বিএনপি নেতা ডা. রফিকের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা