নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ, বেড়েছে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা

আজ ২৪ আগস্ট দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কিশোরী ইয়াসমিনকে পুলিশ সদস্যরা ধর্ষণের পর হত্যা করে। ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাত জন সাধারণ মানুষ। সেই থেকে দিনাজপুরে দিনটি পালিত হয় ‘ইয়াসমিন হত্যা দিবস’ হিসেবে এবং সারা দেশে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে।
ইয়াসমিন হত্যার তিন দশক পরও দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কমেনি, বরং বেড়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৫২৮ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন দুইজনেরও বেশি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫৪ জন এককভাবে ও ১০৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বছরের একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ৪৯৮ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১৪৪ জন। হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “ইয়াসমিন হত্যার ৩০ বছর পরও ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি, বরং আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কন্যা শিশু ধর্ষণ বেড়েছে, বেড়েছে নারী বিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া কেবল আন্দোলনের মাধ্যমে নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়।”
শুধু ধর্ষণ নয়, পারিবারিক সহিংসতাও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত স্বামীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন নারী। স্বামীর পরিবারের হাতে নিহত হয়েছেন ৪২ জন এবং নিজ পরিবারের হাতে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন নারী। পারিবারিক নির্যাতনে মোট নিহত হয়েছেন ৩২২ জন নারী, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে একজন নারী হত্যার শিকার হচ্ছেন। একই সময়ে পারিবারিক সহিংসতার ৩৬৩টি ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
জাতীয় হেল্পলাইনেও নারী নির্যাতনের অভিযোগ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ চলতি বছর সাড়ে আট মাসে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে ১৭ হাজার ৩৪১টি। এর মধ্যে স্বামীর বিরুদ্ধে এসেছে ৯ হাজার ৩৯৪টি অভিযোগ। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ১০৯-এ সাত মাসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে ফোন এসেছে ৪৮ হাজার ৭৪৫টি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী নির্যাতন রোধে শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, সামাজিক সচেতনতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং রাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৪ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন