যশোরে ফুচকা খেয়ে আরও ১১৮ জন হাসপাতালে

যশোরের অভয়নগরে ঈদমেলায় ফুচকা খেয়ে আরও ১১৮ জন শিশু, পুরুষ ও নারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ২১৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদমেলা চলছে। গত সোমবার ঈদের দিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে ফুচকা খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতা ভর্তি হন শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। আশঙ্কাজনক হওয়ায় ১৪ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ফুচকাদোকানি মনির হোসেন পলাতক আছেন।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আলীমুর রাজীব বলেন, ফুচকা খেয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত মোট ২১৩ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি। তাদের মধ্যে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আজ ৫৩ জনকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। আর অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৪ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৬ জন ভর্তি আছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, ফুচকার বিষক্রিয়া থেকে এমনটা হয়েছে। বেশির ভাগ রোগীর পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি ও জ্বরের মতো উপসর্গ নিয়ে এসেছেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদ উপলক্ষে কয়েক বছর ধরে ঈদমেলা হয়। এ বছর ঈদের দিন বিকাল থেকে চার দিনব্যাপী ঈদমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় শত শত মানুষ আসছেন। সেখানে হরেকরকম খাবারের দোকানও বসেছে। যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকা থেকে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি মেলায় অস্থায়ী ফুচকার দোকান দিয়েছিলেন। মেলায় আসা অনেক মানুষ ঈদের দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই দোকান থেকে ফুচকা খান। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে তারা অসুস্থ হতে থাকেন। তাদের পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি ও জ্বর দেখা দেয়।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ অনেকে সোমবার গভীর রাতে, গতকাল মঙ্গলবার দিনে ও রাতে এবং আজ দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
উপজেলার নওয়াপাড়া প্রফেসরপাড়ার আবদুর রউফ গাজী (৩৭) তার মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ওই ঈদমেলায় গিয়েছিলেন। ফুচকা খাওয়ার পর তাদের পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি ও জ্বর দেখা দেয়। প্রথমে তাদের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে পাঁচজনকেই বেসরকারি খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আবদুর রউফ গাজী বলেন, ‘আমি ফুচকা খাইনি, কিন্তু ফুচকা খেয়ে অসুস্থ পরিবারের পাঁচজনকে চিকিৎসকের পরামর্শে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন তাদের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও শঙ্কামুক্ত নয় বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
উপজেলার বুইকরা গ্রামের মহিনুর ইসলাম (৪৫) স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদমেলায় গিয়েছিলেন। তারা ওই দোকানে ফুচকা খান। পরে রাতে বাড়ি ফিরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল সকালে তারা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।
মহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ঈদমেলা থেকে রাতে বাড়ি ফেরার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আলিম বলেন, ফুচকা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তারপরও ওই ফুচকা ব্যবসায়ীকে খোঁজা হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এলএম/এমআর)
মন্তব্য করুন