সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি
সচিবালয়ের কর্মচারীদের বিক্ষোভ, তালা ঝোলানো কর্মসূচি

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–কে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। দাবি পূরণ না হলে সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে বাদামতলায় সমবেত হন। বিক্ষোভকারীরা অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে চলমান এই আন্দোলনে বক্তারা বলেন, ‘নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে চার দশক আগের কিছু বিশেষ বিধান পুনঃস্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো সরকারি চাকরিজীবীদের অধিকার হরণ করে।’
তারা আরও বলেন, ‘অধ্যাদেশটির কিছু ধারা সংবিধানবিরোধী। এটি আমাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হলে কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর গতকাল রবিবার তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
অধ্যাদেশে অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো- সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ বা চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত দণ্ড প্রদান করা যাবে।
এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন।
(ঢাকাটাইমস/২৬মে/এমআর)

মন্তব্য করুন