টিআইবি’র প্রতিবেদন: মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় ইউজিসি

শামসুদ্দোহা, ঢাবি প্রতিনিধি
| আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৪৩ | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:২৭

ঘুষের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। তেমন পাত্তা পায়নি। কিন্তু এখন অভিযোগ করেছে দুর্নীতি বিষয়ক গবেষণা ও পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গত রবিবার টিআইবি দাবি করেছে দেশের আটটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩-২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে প্রভাষক নিয়েছে প্রশাসন!

এদিকে টিআইবি’র প্রতিবেদন প্রকাশের পরে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ইউজিসি।

ইউজিসি’র সদস্য দিল আফরোজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টিআইবির অভিযোগটি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দেশ না আসবে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারছি না।’

টিআইবি’র মতো একটি প্রতিষ্ঠান যখন সংবাদ সম্মেলন করে বলে যে, নয় মাস গবেষণা করে তারা ঘুষের বিনিময়ে প্রভাষক নিয়োগের প্রমাণ পেয়েছেন, তখন সর্বমহলের গুরুত্ব না দিয়ে উপায় থাকে না। ঘটনা আসলে কতটুকু সত্য? টিআইবি কি প্রমাণ ছাড়া এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবে?

টিআইবি অবশ্য ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এমন আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করায় তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের মান এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমন অভাবনীয় অভিযোগের পরে কী ভাবছেন দেশের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় প্রফেসররা?

টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের আটটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে তিন লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়। বলা হয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় উপাচার্যের হাত থাকা কাম্য নয়। বরং উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকলে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা থাকবে না।

ঢাকাটাইমস এ বিষয়ে কথা বলেছিল, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন’র সাথে। তিনি টিআইবির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এই রিপোর্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য টিআইবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করেছে।

তিনি বলেন, “৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বললাম। কেউ তো বলল না যে, টিআইবি তাদের কারোর সাথে যোগাযোগ করেছে। শিক্ষকদের সাথে কথা না বলে এই গবেষণা কীভাবে করা হয়েছে!”

সম্প্রতি মাস্টার্স ডিগ্রি না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন প্রভাষকের নিয়োগ প্রদান প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে, অধ্যাপক ফরিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বুয়েট থেকে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত মেধাবী। নিয়োগ-পরবর্তীতে আমরা তাদের মাস্টার্স করার সুযোগ রেখেছি।’

টিআইবি’র প্রতিবেদন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টিআইবি কোনো ডকুমেন্ট দিলে পরে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হবে।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্য দ্বারা প্রভাষক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এ ধরনের কোনো সুযোগই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবই বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মেনেই করা হয়েছে।’

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দুর্নীতির ওপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল ইউজিসি নিজেই। ইউজিসি’র সেই প্রতিবেদনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বলে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর চার বছরের মাথায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ অনিয়ম দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে যায়। প্রতিবেদনে দুর্নীতির দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে, টিআইবি’র প্রতিবেদনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ না করে প্রকাশিত এই জরিপে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দেশবাসীর কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর প্রতিক্রিয়া জানাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ ১৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রভাষক নিয়োগে অনিয়ম এবং অনৈতিক আর্থিক লেনদেন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কিত যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রকাশিত সংবাদে টিআইবি’র যে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে সেখানে আর্থিক লেনদেন বা অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় জনসাধারণের মনে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে টিআইবি দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে ১৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এ গবেষণা চালায় সে ক্ষেত্রে অনিয়ম বা অনৈতিক লেনদেনের সংশ্লিষ্ট তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় ছিলো। তা হলে বিষয়টি দেশ ও জাতির সামনে পরিস্কার হতো বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে স্বতন্ত্র নিয়োগ নীতিমালা। সে ভিত্তিতেই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে এক্ষেত্রে কোনো এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিষয়ে কোনোরকম অনিয়ম বা অনৈতিক লেনদেন হয়ে থাকলে তার দায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বর্তায় না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে বিদ্যমান নীতিমালা অত্যন্ত যুগোপযোগী যেখানে মেধাকে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়েছে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ মেধা ও যোগ্যতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে স্বচ্ছতার সাথে এ কাজটি সম্পন্ন করে আসছে। পাশাপাশি নিয়োগ সংক্রান্ত অনৈতিক কোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ধরণের প্রশ্রয় দেন না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। জনমনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সর্ম্পকে যাতে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় মনোভাব ও অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।’

টিআইবি নিজে থেকে ঘুষ নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম প্রকাশ না করলেও আগ বাড়িয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস রিলিজ প্রদান করে নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করায়ও অনেকের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/দোহা/এসএএফ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :