ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি রক্ত দিয়ে প্রতিহত হবে: রিজভী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে প্রতিরক্ষা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হতে যাচ্ছে দাবি করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই চুক্তির খবরে সারাদেশের মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। দেশের জনগণ রক্ত ঢেলে দিয়ে অমিত বিক্রমে তা প্রতিহত করবে।
শুক্রবার রাজধানীতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয় নিয়ে গুরুতর শঙ্কা ও সন্দেহ দেশবাসীর মনকে আছন্ন করে রেখেছে। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে চলেছে কী না তা নিয়ে এদেশের মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ নিশ্চয়ই পিন্ডির কাছ থেকে রক্তসাগরের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিল্লীর কাছে হস্তান্তর করতে দেবে না। আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে স্বাধীনতা স্পৃহা অদম্যভাবে অঙ্গীভূত।’
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয় নিয়ে চুক্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। দলের দাবি, এই চুক্তি হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রতিক্রিয়াকে বরাবরের ভারতবিরোধিতা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই সব চুক্তি হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ভারতের সাথে সামরিক-অসামরিক সবচুক্তি হতেই পারে। তবে কোন চুক্তিই গোপন রাখা হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী অভিযোগ করেন ভারতের সঙ্গে সরকারের গোপন চুক্তি রয়েছে। এমনকি কতগুলো চুক্তি হয়েছে তার একটি সংখ্যাও উল্লেখ করেন তিনি। রিজভী বলেন, ‘কাদের সাহেবের নিকট প্রশ্ন রাখতে চাই-ভারতের সাথে অতীতে দেশবিরোধী ট্রানজিট, করিডোর ছাড়াও আপনারা আরো গোপনীয় ৫০টি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন যেটি আজও জনগণ জানতে পারেনি।’
ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করে আসলে কী করতে চায়, সেটিও বলে দিয়েছেন রিজভী। বলেন, ‘ভারত কর্তৃক প্রস্তাবিত ২৫ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার বিক্রি করতে চায়।’ ভারতের একজন সাবেক সেনা প্রধানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সামরিক অস্ত্রসম্ভার সেকেলে, আধুনিক প্রযুক্তি থেকে অনেক দুরে, এগুলো মানসম্মত নয়। ভারত নিজেই হচ্ছে সামরিক সরঞ্জাম আমদানিকারক একটি দেশ। সেক্ষেত্রে ভারত কী ধরণের সমরাস্ত্র বাংলাদেশে রপ্তানি করবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আসলে এর পেছনে যে অন্য উদ্দেশ্য আছে তা বাংলাদেশের মানুষ ভালভাবেই উপলব্ধি করে। ভারতের কাছ থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার আমদানি করলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক্সটেনশন মাত্র। এই চুক্তি হলে ভারত অস্ত্র কেনার শর্তে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার লাইন অফ ক্রেডিট দেবে, অর্থাৎ এই অর্থ দিয়েই ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে। এটি ভারতের কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজার চানক্য নীতি।’
রিজভী বলেন, ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে ভারতের আগ্রহ এবং বাংলাদেশ সরকার চায় সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করতে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও তা চুক্তি সম্পাদনের পথে একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে। সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের জন্য সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করাও হবে বিপজ্জনক।’
ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন