দেওবন্দের নাম বদলাতে চান বিজেপি বিধায়ক

ভারতের প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম যেখানে প্রতিষ্ঠিত, সেই দেওবন্দের নাম বদলের প্রস্তাব করেছেন বিজেপি বিধায়ক ব্রিজেশ সিং। নতুন বিধানসভায় সরকারের কাছে প্রথম প্রস্তাবে দেওবন্দের নাম বদলে দেওভৃন্দ রাখার অনুরোধ জানাবেন তিনি।
সদ্যসমাপ্ত উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ থেকে জয়ী বিজেপি বিধায়ক ব্রিজেশ সিং জানিয়েছেন, তিনি নিজের অঞ্চলের নাম বদল করতে চান। মহাভারতে ওই এলাকার উল্লেখ রয়েছে 'দেওভৃন্দ' নামে। আশপাশের এলাকাগুলোও মহাভারতে জায়গা পেয়েছে। সেই আদিকালের নামেই এখন দেওবন্দকে ফিরিয়ে আনতে চান তিনি।
অন্যদিকে দারুল উলুমের এক প্রাক্তন এক জানিয়েছেন, শুধু ইসলামি শিক্ষার জন্য নয়, ওই প্রতিষ্ঠান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেও বহুল পরিচিত। দেওবন্দের নাম বদল করা হলে তা ইতিহাস বিকৃতির সামিল হবে।
ব্রিজেশ জানিয়েছেন, ‘দেওবন্দ এলাকার উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে, দেওভৃন্দ নামে। এর পাশে একটি এলাকা আছে রণখন্ডী। সেখানে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের রণখন্ড তৈরি হয়েছিল। আরেকটি গ্রাম আছে জঠওয়ালা, মহাভারতে যেটার নাম ছিল যক্ষশালা। এছাড়া দেওবন্দে বহু প্রাচীন শক্তিপীঠ রয়েছে। এসব কারণেই ভোটের প্রচারের সময়ে সাধারণ মানুষ অনুরোধ জানিয়েছিল যাতে দেওবন্দের নাম বদল করে দেওভৃন্দ রাখা হয়। সেই প্রস্তাবটাই নতুন সরকারের কাছে রাখতে চাই।’
মহাভারতে উল্লেখিত এলাকাগুলো আসলেই দেওবন্দ বা তার আশপাশের অঞ্চল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান দারুল উলুমের জন্য দেওবন্দ পরিচিতি পেয়েছে। ১৮৬৬ সালে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানে দেওয়া ইসলামি শিক্ষা যেমন সারাবিশ্বে সমাদৃত, তেমনই এখানকার ধর্মীয় ব্যাখ্যা বা ফতোয়াও ইসলামি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ।
দারুল উলুমের প্রাক্তন ছাত্র মওলানা মুফতি এমদাদুল্লাহ বর্তমানে জমিয়াতুল আ ইম্মা অল উলেমার সভাপতি। তিনি জানান, ‘ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টা তো সব ধর্মেই থাকে, মুসলমানদেরও আছে। সেক্ষেত্রে দারুল উলুমের অবদান তো রয়েছেই। কিন্তু তারচেয়েও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বড় ভূমিকা রেখেছে দারুল উলুম। এখন যদি কেউ ভোটে জিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমান নেতাদের ভূমিকাকে ভুলে যেতে চান, তাহলে তিনি সেটা করতেই পারেন। যেভাবে মুসলমান নেতাদের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে, এবার জায়গার নামটাও বদলে ফেলা হবে। এতো নোংরা রাজনীতি।’
অনেকে মনে করছেন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেওবন্দের নাম পরিচিত হয়ে গেছে বলেই মহাভারতের যুগের নাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শহরের নাম বদল এত সহজ হবে না। কারণ দারুল উলুম আর দেওবন্দ শহর, এই দুটো অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে রয়েছে।
এই শহরে হাজার হাজার হিন্দু দোকানীর খদ্দের দারুল উলুমের হাজার পাঁচেক মুসলমান ছাত্র ও তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনরা এবং কয়েকশো শিক্ষক। অর্থনৈতিকভাবে দুই ধর্মের মানুষ একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকলেও, দুই সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস কিন্তু আলাদা।
তবে ব্রিজেশ দাবি করেন, ‘এলাকার নাম বদল হলেও হিন্দু আর মুসলমান, সকলের উন্নয়নের জন্যই পরিকল্পনা নেয়া হবে। সেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ হবে না। আমাদের এজেন্ডায় কোথাও হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ থাকবে না। যে স্লোগান নরেন্দ্র মোদি দিয়েছেন ''সবকা সাথ, সবকা বিকাশ'', অর্থাৎ সবার সঙ্গে, সবার উন্নয়ন – এলাকার উন্নয়নে সেই পথই অনুসরণ করবো। সেটা দেওবন্দ থাক বা দেওভৃন্দ হোক। ’
তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দারুল উলুমের একজন প্রধান, যিনি গুজরাত থেকে এসেছিলেন এবং একটি মন্তব্যের জেরে তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দু মুসলমান সকলের জন্যই সমানভাবে উন্নয়নের কাজ করেছেন।"
এর আগেও ভারতে জায়গার নাম বদল নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ব্রিটিশদের দেয়া নাম এই যুক্তিতে ক্যালকাটা, বোম্বে, ম্যাড্রাস, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি শহরের নাম বদল হয়েছে। বিজেপি শাসিত হরিয়াণা রাজ্যেও গুরগাঁওয়ের নাম বদলে রাখা হয়েছে গুরুগ্রাম।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/জেএস)

মন্তব্য করুন