যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের নাম কালো কালিতে ঢাকা

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ মে ২০১৭, ০৮:২৯
অ- অ+

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনার বোর্ডে (মন্ত্রীদের নামের তালিকাসহ বোর্ড) যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই মানবতাবিরোধী অপরাধী ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় একা্ত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী মুজাহিদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি ২০১৬ সালে। এরপর আমি এই উদ্যোগটি নিয়েছি। আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার ফাঁসি হয়েছে। তার নাম ওনার বোর্ডে থাকতে পারে না। যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা ছিলেন সে সময়ের জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুজাহিদ। ৭৫ এর পটপরিবর্তনের সুযোগে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং এক পর্যায়ে জামায়াতের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন নিজামী-মুজাহিদসহ জামায়াতের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতারা। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাউকে তার আগে কখনও ফাঁসিকাষ্ঠে যেতে হয়নি।

৬৮ বছর বয়সী মুজাহিদ সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেছিল, ‘এ ধরনের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ পাওয়ার পর অপরাধী সর্বোচ্চ দণ্ড না পেলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিহাস।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলে ২০১৫ সালের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে।

১৯৮৯ সালে মন্ত্রণালয় গঠনের পর এখন পর্যন্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপদেষ্টা হিসেবে মন্ত্রণালয়ের অনার বোর্ডে নাম আছে মোট ১৮ জনের। যদিও এই দায়িত্ব পালন করেছেন মোট ১৯ জন।

বাংলাদেশের প্রথম সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নাম রেজওয়ানুল হক চৌধুরী। এরশাদ সরকারের আমলে এই মন্ত্রণালয় গঠনের পর তিনি ১৯৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯৯০ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলান আলমগীর এম এ কবির

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ থেকে একই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সামলান তরিকুল ইসলাম। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হন এবং ১৯৯৩ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মন্ত্রণালয় সামলান নাজমা চৌধুরী। ওই বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর দায়িত্বে ছিলেন মোজাম্মেল হক।

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন রোকেয়া আফজাল রহমান। আর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর দায়িত্বে ছিলেন মুজাহিদ।

২০০৬ সালে বিএনপির রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সামলেছেন ইয়াসমির মোর্শেদ। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমে গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী এবং পরে সামলেছেন এম এ মালেক।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সামলেছেন এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। তার মৃত্যুর পর এই ওই সরকারের আমলে আর মন্ত্রী হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা প্রমোদ মানকিনই ওই সরকারের মেয়াদ অবধি সামলেছেন দায়িত্ব।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার এক সপ্তাহ হক আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে মন্ত্রী হন সৈয়দ মহসিন আলী। তার মৃত্যুর পর আর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদই সামলাচ্ছেন দায়িত্ব।

(ঢাকাটাইমস/১২মে/এমএম/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের ঢল
ভয়ংকর এক ‘ইনসাফ’ নিয়ে হাজির মোশাররফ করিম
খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্র উত্তরণকে সহজ করবে: মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা