হেইজ অ্যান্ড হার্লিংটন থেকে মাশরাফিদের কাছে

দেলোয়ার হোসেন, ওভাল, লন্ডন থেকে
| আপডেট : ৩০ মে ২০১৭, ১৯:২৩ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০১৭, ১৮:০৯

শনিবার লন্ডন পৌঁছে হেইজ অ্যান্ড হার্লিংটনে ওঠেছিলাম সেলিম ভাইয়ের বাসায়। তিনি বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন অফিসের অপারেশন্স ম্যানেজার। ঢাকায় পোস্টিং থাকাকালে শখের বসে এক সময় সাংবাদিকতাও করতেন চাকরির ফাঁকে। এখন তার অফিস হিথ্রু এয়ারপোর্টে। যে কারণে এয়ারপোর্টের অদূরেই বাসা তার। এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দর পরিপাটি বাসা। লন্ডন সিটি, এখানকার মানুষের মতো এই বাসাটাও আমার খুব ভালো লেগে গেল।

কিন্তু ভালো লাগার বাসায় আমার তিন দিনের বেশি থাকা হলো না। কারণ, এই বাসা থেকে ওভাল স্টেডিযাম অনেক দূরে। ওভালে যেতে তিনবার ট্রেন পরিবর্তন করতে হয়। ঘণ্টা দেড়েক লেগে যায়। ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর এতটা পথ জার্নি করে ওভালে যাওয়াটা আমার পক্ষে খুবই কঠিন। এই তিন দিনে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সেলিম ভাই আমার অবস্থা বুঝতে পারলেন। ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই কিছু দূরে চ্যাম্পিয়ন হিলসে তার এক বন্ধুর আত্মীয়’র বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।

সকাল ৭টার দিকে রওনা হলাম। গত দুই দিন ধরে সূর্য মেঘের আড়ালে। বৃষ্টিও হয়েছে বেশ কয়েকবার। কনকনে ঠান্ডা সকাল। আমাকে নতুন গন্তব্যে পৌঁছে সেখানে লাগেজ রেখে আবার স্টেডিয়াম দ্য ওভালে ফিরতে হবে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বাংলাদেশ ভারত প্রাকটিস ম্যাচ। সেলিম ভাইয়ের বাসা থেকে হেইজ অ্যান্ড হার্লিংটন স্টেশন ১৫ মিনিটের পথ। কোনো দিক না তাকিয়ে লাগেজ নিয়ে দ্রুত হাঁটছি। এই ১৫ মিনিটের পথ যেতে আমি অন্তত পাঁচবার গুড মর্নিং অভিবাদন পেলাম। অবাক হলাম। আমাকে চেনেন না জানেন না, চেহারাই বলে দিচ্ছে, আমি তৃতীয় বিশ্ব থেকে এসেছি। আমাকে তো তাদের অবজ্ঞা করারই কথা। অথচ সেটা না করে তারা আমাকে গুড মর্নিং জানাচ্ছেন! ব্রিটিশরা যে কতটা বিনয়ী এটা তার ছোট্র উদাহারণ মাত্র। জ্ঞান, বিজ্ঞান, সভ্যতা দিয়েই তারা শুধু নিজেরা আলোকিত হননি, আলোকিত হয়েছেন নম্রতা, ভদ্রতা, মানবতা এবং অসীম ধৈর্যের মতো নানা গুণাবলী দিয়েও। আমাদের দেশে এমন মানুষ কোথায়?

ঘণ্টা দেড়েক জার্নির পর নামলাম ওভাল স্টেশনে। সেখান থেনে বাসে করে পৌঁছালাম চ্যাম্পিয়ন হিলসে। নতুন এ গন্তব্য আমার জন্য দুই দিক দিয়েই ভালো হলো। প্রথমত, এখান থেকে দ্য ওভাল তেমন দূরে নয়। বাসে ২৫-৩০ মিনিটের পথ। অন্যদিকে ওভাল থেকে মাশরাফি-সাকিবদের হোটেলও কাছে। মাশরাফিদের হোটেলের নাম গ্যারাঞ্জ সিটি হোটেল। টাওয়ার ব্রিজ থেকে সামান্য দূরে টেমস নদীর তীরে অবস্থিত নয়নাভিরাম এ হোটেলটি ওভাল স্টেডিয়াম থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। নিউজিল্যান্ড এবং ভারতীয় দলও এখানে ওঠেছে।

চ্যাম্পিয়ন হিলস থেকে ওভালে ফিরতে ফিরতে ১১টা বেজে গেল। ততক্ষণে ম্যাচ ৮-১০ ওভার হয়ে গেছে। ওভাল স্টেডিয়ামে এসে আরেকবার মুগ্ধ হলাম। স্টেডিয়ামের চার পাশে এবং স্টেডিয়ামে আসার রাস্তাগুলোতে অসংখ্য ভলেন্টিয়ার, যারা আগন্তকদের স্বাগত জানানোর জন্য বিনয়ী হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওয়েলকাম, গুড মর্নিং, গুড লাক। প্রেস বক্সে ঢোকা পর্যন্ত অন্তত ২০ বার এভাবে স্বাগত জানানো হলো। ব্রিটিশদের কাছে শুধু জ্ঞান বিজ্ঞান নয়, ভদ্রতা নম্রতাও শেখার আছে।

লেখক: ক্রীড়া সম্পাদক, ঢাকাটাইমস

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :