জনগণের চোখে নিকৃষ্টতম বাজেট: এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুন ২০১৭, ১৯:৪৬ | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০১৭, ১৬:২৩

আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের আগেই একে জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, এটা জনগণের চোখে নিকৃষ্টতম বাজেট।

ঈদের ছুটির পর বুধবার বাজেট অধিবেশন শুরুর প্রথম দিন প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেয়ার সময় এরশাদ এ কথা বলেন।

গত ১ জুন সংসদে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর গত প্রায় এক মাস ধরে বাজেটের ওপর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে সংসদে। এসব আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু সংশোধনীসহ বৃহস্পতিবার পাস হবে নতুন অর্থবছরের বাজেট। আর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এই বাজেট।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন- ওটা উনার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট। আমি বলবো- উনার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট হতে পারে। জনগণের কাছে কিন্তু এটা নিকৃষ্টতম বাজেট। ব্যবসায়ী পত্রিকা, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সব গবেষণা সংস্থা এই বাজেটকে দুঃসহ বাজেট বলে বর্ণনা করেছে। রিকশাওয়ালা, ক্ষেতমজুর, ঠেলা গাড়িওয়ালা, ছোট ব্যবসায়ীরা মহাআতঙ্কে আছেন। কারণ তাদের ভাষায় বাজেট হলো ডার্কনেস। তারা আলোর সন্ধান পাচ্ছেন না।’

এরশাদ বলেন, ‘আমরা ছয় থেকে সাত ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। আগামী অর্থবছরে সাত দশমিক চার ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের বাড়তি ৬৬ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বেসরকারি বিনিয়োগ লাগবে। সরকারি বিনিয়োগ লাগবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। জিডিপি অনুপাতে এ পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়ায় কর্মসংস্থান কমেছে। বিনোয়গ ছাড়া, কর্মসংস্থান ছাড়া সত্যিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি সম্ভব? তাহলে কীভাবে সাত দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে অর্জন করবেন।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা বাজেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার কোনো যুক্তিসংগত উত্তর অর্থমন্ত্রী দিতে পারেননি।’

শেয়ার মার্কেট ও মানি মার্কেট দুই জায়গায় তালমাতাল অবস্থা উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানি মার্কেট ক্যান্সারে আক্রান্ত, সমস্ত ব্যাংক লুটপাট। লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ লোপাট হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। সে সম্পর্কে উনি (অর্থমন্ত্রী) কিছু বলেননি।’

এরশাদ বলেন, ‘আমি বেসিক ব্যাংক করেছিলাম, সাতটি ব্যাংক প্রাইভেট সেক্টরে দিয়েছিলাম। বেসিক ব্যাংক করেছিলাম স্মল ইন্ডাস্ট্রির জন্য। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক করেছিলাম কৃষকদের লোন দেয়ার জন্য। সে দুইটি ব্যাংকের অবস্থা করুন। যে সময় লুটপাট হলো, জনগণ জানতে চাইলো কারা এর পেছনে ছিল। কেন তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তারা কি সরকারের চেয়েও এতই শক্তিশালী? আমরা জানতে চাই, কারা লুটপাটের পেছনে আছে। কারা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে জানতে চাই আমরা।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লুটের সমালোচনা করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হয়েছে। অনেক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অনেকের নামও এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কেন? তারা কি ধরা ছোয়ার ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হলো। পৃথিবীর অনন্য ঘটনা ঘটলো। আমরা তাদের নামও জানতে পারলাম না। অপরাধীরা সমাজে এখনো বিচরণ করছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা কী হতে পারে। আমি অবিলম্বে আপনার কাছে অনুরোধ জানাবো, যারা ব্যাংক খাত লুটপাট করলো তাদের নাম প্রকাশ করতে। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে।’

শেয়ারবাজার সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ‘শক্তিশালী শেয়ারমার্কেট ছাড়া সমৃদ্ধি অর্থনীতি গড়ে তোলা যায় না। ২০১০ সালে শেয়ার মার্কেট ক্রাস করলো। আমি সেখানে গিয়েছিলাম, মানুষের কান্না শুনেছি। আর্তনাদ শুনেছি। অসংখ্যা মানুষ আত্মহত্যা করেছে। তাদের জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় লুটপাট হয়ে গেছে। শেয়ার মার্কেট পুনরুজ্জীবনের জন্য সরকার এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। তার মূল কারণ আস্থার সঙ্কট।’

শিক্ষা সম্পর্কে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আমি নিজে দেখেছি, শিক্ষকরা ছাত্রদের নকল করতে সাহয্য করে। আমরা শিখেছি, বাপ-মার পর যাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা যায় তিনি হলেন শিক্ষক। এই শিক্ষক যখন নকলে সাহায্য করেন, সমাজ কোথায় গেছে, আমরা বুঝতে পারি। আমার ভাবতে ঘৃণা হয়, কীভাবে একজন শিক্ষক নকলে সাহায্য করতে পারেন।

এরশাদ আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণলয়ের নির্দেশ সবাইকে পাস করাতে হবে। সেই কারণে আমরা যে কি সৃষ্টি করছি, আমার চেয়ে আপনারা সবাই ভাল জানেন। আগামী প্রজন্মকে আমরা কী শিখাচ্ছি।’

এসময় জাপা চেয়ারম্যান জিপিএ পদ্ধতি থেকে আবার ডিভিশন পদ্ধতিতে যাওয়ার দাবি করেন।

এরশাদ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, রংপুরে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। আমরা অনেক খুশি হব। রংপুর তো আপনার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি মানে নিজের বারি। প্রধানমন্ত্রী আপনি এটা করুন। আমরা সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করুন আমরা খুব খুশি হব। দিনাজপুর থেকে বোর্ড রংপুরে স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।

খাদ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে খাদ্যের দাম বাড়লো কেন। বাড়তি আমদানি করতে হলো কেন। কেন মনিটারিং করা হলো না। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেল। ৫০ টাকা কেজি হয়ে গেল। দ্রুত চাল আমদানি করা হোক।

বেকারত্ব নিয়ে এরশাদ বলেন, এত বেকার এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আমি দেখলাম সরকারি পরিসংখ্যান ২৬ লাখ। এটা ভুয়া। একটা কনেস্টবলের চাকরি নিতে পাঁচ লাখ টাকা লাগে। এটা লজ্জাজনক। গরিব মানুষের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি দিব। এটা বন্ধ করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/ ২৮ জুন/এমএবি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :