‘প্রধান বিচারপতির ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বক্তব্য তথ্যনির্ভর নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৩৬

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে সেটা তথ্যনির্ভর নয় বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার এই রায়ের বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করে। কিন্তু গত ৩ জুলাই সেই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। আর ১ আগস্ট প্রকাশ হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।

রায়ে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে না রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়, ‘৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে দলীয় নির্দেশনার বাইরে একজন সংসদ সদস্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সেখানে বিচারক অপসারণের বিষয়ে তারা কীভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মত দেবেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।’

‘সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হলে বিচারকেরা দলের হাইকমাণ্ডের অনুকম্পানির্ভর হয়ে পড়বেন’- বলা হয় রায়ে।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে যেটা আছে সেটা হচ্ছে যে, যদি কোনো সংসদ সদস্য যেই পার্টি দ্বারা তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সেই পার্টির বিরুদ্ধে ভোট দেন তাহলে পরে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়।’

তবে এই অনুচ্ছেদ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পার্লামেন্টারি প্র্যাকটিসে পার্টি যখন বলে দেয় যে এই ইস্যুটা পার্টির, এইটার বাইরে ভোট দেয়া যাবে না। উদাহরণ- নো কনভিডেন্স মোশন। তখনই কিন্তু আর্টিক্যাল সেভেনটি কামস ইনটু প্লে। এটাও কিন্তু সংসদে পরিষ্কার করা হয়েছে যে অ্যাট টাইমস দেয়ার ক্যান ভি প্রিভোট। তাহলে এই যে উনারা রায়ে বলেছেন আর্টিক্যাল সেভেনটির জন্য ষোড়শ সংশোধনী বিতর্কিত হবে সেটা কিন্তু ঠিক না।’

‘তার কারণ হচ্ছে উনারা কিন্তু জানেন না যে এটা পার্টি ভোট দেবে না এটা প্রি ভোট হবে। আমরা যে আইন করেছিলাম যেই পদ্ধতি আমরা দিয়েছিলাম সেখানে কিন্তু এটা পার্টি লাইনে ভোট হবে এমন কথা ছিল না এবং এমন কোনো ইঙ্গিতও ছিল না। সেই ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি যে আর্টিক্যাল ৭০ সম্পর্কে যেই কথা বলা হয়েছে সেটা কিন্তু অত্যন্ত তথ্যনির্ভর নয়।’

আইনগতভাবেই মোকাবেলা

সংবাদ সম্মেলনে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় আইনগতভাবেই মোকাবেলা করার কথা বলেন আইনমন্ত্রী। বলেন, এই রায় রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার কোনো অভিপ্রায় সরকারের নেই।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে সরকার দুঃখিত। এই পর্যবেক্ষণে ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা যুক্তিতাড়িত নয়, আবেগ বা বিদ্বেষতাড়িত।

সুপ্রিম কোর্ট বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনলেও আইনমন্ত্রী এই ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেন আইনমন্ত্রী। এরপর তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন চান।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আপানারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করছেন কেন?- এমন প্রশ্ন ছিল এক গণমাধ্যমকর্মীর। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমরা আইনগতভাবেই এর মোকাবেলা করব। আমাদের এমন কোনো অভিপ্রায় নেই যে এটাকে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। কিন্তু এখানে যেই সব রাজনৈতিক বক্তব্য আনা হয়েছে। এখানে যেইসব ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। সেই কনস্ট্রাকটিভ আলাপ-আলোচনা ধরে যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কোনো মতামত দেন তাহলে আমার মনে হয়না সেটা রাজনৈতিক মোকাবেলার শামিল।’

‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন তিনি সরকারি এবং বিরোধী দলের রাজনীতিতে পা দেবেন না’- অন্য এক গণমাধ্যমকর্মীর এমন মন্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। উনি যেটা বলেছেন সেটা গ্রহণ করলাম।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া। এটা রেসটোরেশনের ব্যাপারে যে আদেশটা দেয়া হয়েছে, সে আদেশটা সম্পর্কে কিন্তু বাংলাদেশে যেসব রায় আছে সেসব রায় কিন্তু অত্যন্ত পরিষ্কার নয়। এখানে বলা হয়েছে যে, অষ্টম সংশোধনী মামলা যেটা আনোয়ার হোসেন বনাম বাংলাদেশ। এই মামলায় কিন্তু আর্টিক্যাল হানড্রেটটা রিভাইস করে দেয়া হয়েছিল। সেই কারণে এটার উপর নির্ভর করে আজকের সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল রেসটর করা হয়েছে। কিন্তু এইটা যে সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ সেটা নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এবং আমার মনে হয় সেই বিতর্কের উপর নির্ভর করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা কিন্তু সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।’

‘এই দেশ জনগণের নয়, এই দেশ বিচারকদের’- সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। তিনি যুক্তি দিয়ে তার বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার যুক্তি এখনো পড়িনি। আমি পড়ে তারপর মন্তব্য করব।’

বিচার বিভাগ আর সরকার কী মুখোমুখি অবস্থানে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মো্টেই নয়। একদমনই না।’

‘রায়ের পর বিচারকের দায়বদ্ধতার জায়গাটা কোথায়?’ এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগের দায়বদ্ধতা সব সময়ই জনগণের কাছে থাকবে। এটাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। এমনকি এটা কোন রায়ই কেড়ে নিতে পারবে না।’

ইলেকশন কমিশনসহ বেশ কিছু বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ মানা কতটা বাধ্যতামূলক কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন এটস অ্যা অবজারবেশন অব দ্যা কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ এটা। নট অ্যানি কোর্ট, দিস ইজ দ্য অবজারবেশন অব দ্য হাইয়েস্ট কোর্ট অব দ্য কান্ট্রি। সেইখানে এই সব যদি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে দেখতে হবে...।‘

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখবেন সংবিধানের ব্যাপারে আপিল বিভাগের যেসব রায় আছে সেখানে বিশেষ করে আনোয়ার হোসেন মামলায় আমি বলতে পারি সেখানে বলা হয়েছে, ইউস অ্যান কনস্টিটিউশন যদি থাকে এটা একটা স্যাটরোসেন্ট জিনিস। এটা সময়ের, এটা হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন এবং সময়ে সময়ে জনগণের ইচ্ছা যদি বদলায় তাহলে এটা অ্যামেন্ড করা যায়। সেই জন্যই কিন্তু সংবিধানের আর্টিকেল ১৪২ আছে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো জনগণের ম্যানডেটে অন্যান পরিবর্তনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফল ঘটে তাহলে নিশ্চিয়ই সেইগুলো পরিবর্তন করব।’

‘ওনারা তো কোর্টই মানেন না’

ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায় নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা কোর্ট মানেন না। বিচারককে সম্মান করেন না। একজন জামিনপ্রাপ্ত আসামি (খালেদা জিয়া) বিদেশ চলে যান কোর্টের অনুমতি নেন না। আইন মানেন না। তাদের মুখে আইনের শাসন আর এই সব কথা সাজে না। উনারা ওই সব ঠিক করে আসুক। তারপর উপদেশ গ্রহণ করব।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সেটা তাদের ব্যাপার। আমার কথা হচ্ছে। আজকে কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতি পরিষ্কার করে বলেছেন, তার এই রায় নিয়ে যেন কোনো রাজনীতি না হয়।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এতদিন পরে তড়িঘড়ি করে রায় দেয়ার পর জুডিসিয়াল কাউন্সিলের যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল সেটা দুঃখজনক।’

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য দুর্বল ছিল কি না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের তথ্য উপস্থাপনে কোনো দুর্বলতা ছিল না বলে আমার মনে হয়।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দ্যাট ইজ অ্যান কমপ্লিটলি শাট থিং। এটা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির কোনো সুযোগ নয়।’

এই রায় কী ষড়যন্ত্র কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রায় রায়ই। আমি এ বিষয়টিকে এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও করণীয় নির্ধারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কমিটি

উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে দেড় লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন

১ কোটি পরিবারের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু মঙ্গলবার

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

‘গোল্ডেন রাইস-বিটি বেগুন বাণিজ্যের জন্যই করা হয়েছে’

ভোটের আগে-পরে ১৪ দিন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আরও আলোচনা হবে, সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী

বুধবার ১৪১ উপজেলায় সাধারণ ছুটি

সপ্তাহে সাত দিন সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট যাবে ইউএস-বাংলার, যাত্রা শুরু ১ আগস্ট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :