সাত খুন: র‌্যাবে নিয়োগে সতর্ক থাকতে আদালতের পরামর্শ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১৫ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩০

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনাটি বিবেচনায় রেখে র‌্যাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার রায়ে। এই ঘটনায় জড়িত র‌্যাব সদস্যরা উচ্চাভিলাষী ছিলেন জানিয়ে বিচারক বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের কেউ বাহিনীতে ঢুকে ঘৃণ্যতম অপরাধের সাথে যুক্ত হতে না পারে।

রায় ঘোষণার এক সপ্তাহ পর রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন।

গত সোমবার আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেদিন বিচারক কেবল সংক্ষিপ্ত আদেশে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং নয় জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণা করেন। কিন্তু সেদিন রায়ের পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়নি। এর ছয় দিনের মাথায় রবিবার রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ডসহ যাবতীয় নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। দুপুরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লাল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় এসব কাগজপত্র পাঠানো হয়। একই দিন আগে রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় সাজা পেয়েছেন র‌্যাব-১১ এর ২৫ জন সদস্য। এদের মধ্যে বাহিনীটির সে সময়ের অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, দুই কর্মকর্তা এম এম রানা ও আরিফ হোসেনসহ ১২ জন পেয়েছেন মৃত্যুদণ্ড। তবে রায় ঘোষণাকারী বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন মনে করেন, র‌্যাবের বিপুল সংখ্যক সদস্য সাজা পেলেও এর দায় বাহিনীর নয়। যারা অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের দায় এটি।

সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর একটি বড় অংশের সম্পৃক্ততার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে র‌্যাব। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাহিনী হিসেবেও র‌্যাব দায়িত্ব এড়াতে পারে না-বলে আসছিলেন সমালোচকরা। রায় ঘোষণার পরও র‌্যাবে সংস্কারের দাবি করেন অপরাধ ও আইন বিশেষজ্ঞরা। সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই রায় শৃঙ্খলাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের জন্য একটি কঠোরবার্তা।

তবে এই রায় ঘোষণার চারদিন পর গত ২০ জানুয়ারি রংপুরে এক অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, এই ঘটনার দায় বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের ওপর বর্তায় না। ২৫ কর্মকর্তা ও সদস্যের জন্য র‌্যাবকে দোষারোপ করা অন্যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে একই দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র‌্যাব ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করে।

তবে সাত খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ২৫ র‌্যাব সদস্যের মান সম্মান ক্ষুন্ন হলেও সার্বিকভাবে র‌্যাব বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন রায় ঘোষণাকারী বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘র‌্যাব আমাদের জাতির একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী, তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে র‌্যাবকে প্রশংসাও করেছেন। আবার তিরস্কার দিয়েছেন, যাতে করে ভবিষ্যতে র‌্যাব বাহিনীতে এই ধরণের উচ্চাভিলাসী, ঘৃণ্যতম অপরাধের সাথে যুক্ত হতে না পারে। এ জন্য র‌্যাব বাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে সর্তক রাখার পরার্মশ দেয়া হয়েছে।’

ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘র‌্যাব একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী। এই বাহিনীর অনেক সুনাম ও সুখ্যাত অর্জন এই দেশে আছে। সন্ত্রাস বিরোধী থেকে শুরু করে জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জন রয়েছে এই বাহিনীর। কিন্তু এদের যে কয়কজন ব্যক্তি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে এই ঘটনার জন্য বেসামরিক মানুষের সঙ্গে মিশে এই খুন করেছে। এই সমস্ত দায় দায়িত্ব তাদের। তারা উচ্চাভিলাসী জায়গা থেকে ঘৃণ্যতম অপরাধটি করেছেন।’

লক্ষ্য ছিল নজরুল, ঘটনার শিকার বাকি ছয় জন

রায়ে বলা হয়, সাত জনকে হত্যা করা হলেও খুনিদের লক্ষ্য ছিল সিটি করপোরেশনের সে সময়ের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। বাকি ছয় জন ঘটনার শিকার হয়েছেন। নজরুলের সঙ্গে এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের দ্বন্দ্ব ছিল। এর জেরেই এই খুন হয়েছে।

খোকন জানান, রায়ের পর্যবক্ষেণে বলা হয়েছে, প্যানেল মেয়র নজরুলকে হত্যা করতে গিয়ে নিরীহ ছয় জন মানুষ র‌্যাব ও নূর হোসেন বাহিনীর দ্বারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।

আদালত ঘটনাটি একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপধগামী দুষ্কৃতকারী ও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসীদের অপকর্ম হিসেবে দেখছে। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গডফাদার। অপর একজন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও এলাকায় প্রভাশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

২০১৪ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে সাত খুনের ঘটনায় মামলা হয় দুটি। ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি সাত জনকে ১০ বছরের এবং দুই জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়, দুটির মামলার রায় হলেও আসামিরা সাজা ভোগ করবে এক সঙ্গে।

যারা পলাতক আছেন তারা গ্রেপ্তারের দিন থেকে অথবা আত্মসমর্পণ করলে সেদিন থেকে তাদের সাজা গণনা শুরু হবে।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সিদ্ধিরগঞ্জে বস্তাবন্দি স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি

মফস্বল সাংবাদিকেদের ওয়েজ বোর্ডের আওতার আনার দাবি

আ.লীগ বিভ্রান্তিকর কথা বলে নিজেদের ভেতরকার অস্থিরতা আড়াল করছে: প্রিন্স

‘ওরাল ক্যান্সার’ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর

‘মনে হয় আত্মহত্যা করি, তাতে যদি বেঁচে যাই!’

ফেলোশিপে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন সাতক্ষীরা মেডিকেলের ডা. মাহমুদুল হাসান

গাজীপুরে দুর্ঘটনা: দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

শ্রীপুরে তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে লিচু

চেয়ারম্যানের উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে

ট্রাকের পেছনে মুরগিবোঝাই পিকআপের ধাক্কা, নিহত ২

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :