‘মানুষকে নানাভাবে আইনের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৩ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৩০

দেশের মানুষকে নানাভাবে আইনের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে যেকোনো কাউকে বাসা থেকে কিংবা ভিন্ন স্থান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ততা নিয়মিতই অস্বীকার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কখনো চাপের মুখে দায় স্বীকার করলেও নানাভাবে আইনের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে এসব মানুষকে।’

শনিবার বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ এর নিয়মিত টকশো ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় দেশের সব সাময়িক বিষয়া ও দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রশাসনিক ক্ষমতার কাছে নাগরিকরা স্বাধীন নয় এমন মন্তব্য করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো সময় তারা (প্রশাসন) তুলে নিয়ে যেতে পারে। তুলে নেয়ার পর পরিবারের লোকরা দাবি করে যে সরকারের লোকরা এই পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে, তখন অস্বীকারের একটা প্রবণতা আমরা দেখি। তারপর দেখি তাদের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখি, হয়ত তারা চাপ অনুভব করে। তখন বেশ কিছুদিন পরে হলেও তারা স্বীকার করে, আমরা তুলে নিয়েছি জিজ্ঞাসাবাসের জন্য। তারপর তারা আইনি প্রক্রিয়ায় যায়।’

মাহমুদুর রহমান মান্নাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ টেনে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্নাকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার ১৭/১৮ ঘন্টা পরে সেটা জানানো হয়েছিল।’

আইনের এ ধরণের প্রয়োগ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, ‘যেকোনো সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে একেবারেই সংগতিপূর্ণ না। এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া, রাতে বেলা বাড়ি ঘেরাও করে ধরে নিয়ে যাওয়া কতটা আইন সংগত। আগে আমরা যেটা দেখতাম, পুলিশ রাতের বেলা বাড়ি ঘেরাও করে রাখবে ভোর হওয়ার পর ধরে নিয়ে যাবে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের সময় এই নিয়মটি দেখেছিলাম। স্বাধীন দেশে এই নিয়ম নেই কেন? তাহলে আমাদের দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো স্বাধীন, নাগরিকরা স্বাধীন না?’

সরকার নিজেদের বাহিরে অন্য রাজনৈতিক শক্তিতে আতঙ্কগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। এজন্য জনগণের সম্পদ শহিদ মিনারকে কেন্দ্র করেও রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন তিনি।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিরোধীপক্ষের যেকোনো ধরনের শোডাউনকে সরকারি দল সহজভাবে নিতে পারছে না। আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, সরকার খুব নার্ভাস। সরকারের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘শহিদ মিনার জনগণের সম্পদ। তার রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেখানে আজ যে বাধাটা দেয়া হল তাতে মনে হল শহীদ মিনার যে জনগণের একটা প্লাটফর্ম ছিল, সেটা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হলো। শহীদ মিনারকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার একটা চেষ্টা মনে হলেও কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাল করেনি।’

‘তবে তারা এটা নিজেরা করেছেন, নাকি সরকারের ইঙ্গিতে করেছেন সেটাও দেখতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে এখন যারা আছেন তারা তো সরকারের পছন্দের লোকরাই সেটা চালাচ্ছেন। তারা তাদের চাকরি রক্ষার্থে সরকারকে খুশি করার জন্যই সব কিছু করবেন এটা বোঝাই যায়।’

আলোচনায় ৫৭ ধারা নিয়ে কথা বলেন মহিউদ্দিন আহমেদ। ৫৭ ধারাকে জনগণ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫৭ ধারায় যা ছিল তাকেই আবার ৩২ ধারায় সংযোজন করা হয়েছে। এমনকি আইনগুলোকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।’

সরকারের সমালোচনা আর রাষ্ট্রের সমালোচনা এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রেরবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডগুলোকে ছাকনি দিয়ে যাচাই করার মত তো অনেক আইন আছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যারা এগুলোর দেখভাল করে তারা আগের চাইতে অনেক বেশি সংগঠিত এবং শক্তিশালী। তারা কেন এত আষ্টেপিষ্টে বাঁধতে চাচ্ছেন নাগরিকদের। এই আইন সে আইন দিয়ে। পাকিস্তান আমলে এমন একটা আইন ছিল ‘দেশ রক্ষা আইন’।’

মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘সরকারের সমালোচনাকে আমরা কেন রাষ্ট্রদ্রোহীতা বলবো? তাহলে কি আমরা বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলবো? পাকিস্তান সরকারের আমলে তিনি সরকারের সমালোচক ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছিল। সরকারের সমালোচনা এবং রাষ্ট্রের সমালোচনা তো এক জিনিস না। এটা গণতন্ত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ না। সরকার মানে তো রাষ্ট্র না। সরকার আসবে যাবে, রাষ্ট্র থাকবে। রাষ্ট্র হচ্ছে জনগণের।’

সবকিছুর মধ্যে ষড়যন্ত্র দেখাতে পাকিস্তানি মানসিকতা বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘কোনো অভিযোগ হলেই তদন্তের আগেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিভাবে বলতে পারে এটা রাষ্ট্রদ্রোহীতা? এটা তো নির্ধারিত হবে কোর্টে। পাকিস্তানি মানসিকতার বিরুদ্ধে আমরা কথা বলি। পাকিস্তানির তত্ত্বটা হচ্ছে কথায় কথায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বটিকে উত্থাপন করা এবং সরকারের সমালোচকদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা। এই জিনিসটাই হচ্ছে পাকিস্তানি মানসিকতা। সব কিছুর মধ্যে ষড়যন্ত্র দেখা।’

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/কারই/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও করণীয় নির্ধারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কমিটি

উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে দেড় লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন

১ কোটি পরিবারের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু মঙ্গলবার

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

‘গোল্ডেন রাইস-বিটি বেগুন বাণিজ্যের জন্যই করা হয়েছে’

ভোটের আগে-পরে ১৪ দিন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আরও আলোচনা হবে, সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী

বুধবার ১৪১ উপজেলায় সাধারণ ছুটি

সপ্তাহে সাত দিন সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট যাবে ইউএস-বাংলার, যাত্রা শুরু ১ আগস্ট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :