ছাত্র সংসদ নির্বাচন জগন্নাথে শুধুই হতাশা

ইসরাফিল হোসাইন
  প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৪
অ- অ+

প্রায় তিন দশক আটকে থাকা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে ব্যতিক্রম শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে হতাশা। কারণ, সেখানে ভোটের কোনো সুযোগই নেই।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। তাই চাইলেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অপেক্ষা করতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত।

জগন্নাথ যখন কলেজ ছিল তখন অবশ্য ছাত্র সংগঠন ছিল প্রতিষ্ঠানটিতে। সংক্ষিপ্ত নাম জকসু, পুরো নাম জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের মধ্যে জাসকুর সদস্যও কম নন। কিন্তু এই রাজনীতিক গড়ার কারখানা বিশ্ববিদ্যালয় কেন বন্ধ করে রাখবে, সেটা বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ১৯৯০ সালের পর আর হয়নি। তখন আক্ষেপ ছিল এক রকম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি চলার সময় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন শুরু হয়েছে উদ্বেগ, তখন এই আক্ষেপ রীতিমতো ক্ষোভে রূপ নিয়েছে জগন্নাথে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র সংসদ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়েই মুক্তচিন্তার পরিবেশ থাকে না, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবি-দাওয়া আদায়, ছাত্রদের অধিকারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার সুযোগ থাকে না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নবম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী কাজী আবু তৈয়ব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছাত্র সংসদ প্রতিনিধি নির্বাচন করা শিক্ষার্থীদের একটি অধিকার। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের কথা জানাবে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নীতিমালা না থাকাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া থাকবে প্রশাসন যেন দ্রুত নীতিমালা তৈরি করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।’

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র সংসদ অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। তাই নীতিমালার দোহাই দিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে টালবাহানা করছে। যেহেতু ছাত্র সংসদ পূর্বেও হয়েছে, সেহেতু সেই নীতিমালার সাথে বর্তমান কিছু আইন সংযুক্ত করলেই হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের উচিত ডাকসুর মতো দ্রুত জকসুর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’

বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আগে জকসুর ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। ১৯৫৪ সালে প্রথম এবং ১৯৮৭ সালে হয় শেষ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে নতুন করে নির্বাচন দিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি সংশোধন করতে হবে। সেটা তাদের হাতে নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হলে জগন্নাথে হবে না, এটা মানতেই পারছেন না খোদ উপাচার্য মীজানুর রহমান। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সব জায়গায় নির্বাচন হবে আর ছাত্র সংসদের ভোট হবে না, এটা হয় না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত।’

তাহলে প্রশাসনের উদ্যোগ কী হবে- এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের কথা মাথা রেখে বলছে, যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত করা হয়নি। ডাকসু নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে ছাত্র সংসদের আইন পাস করে তা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠাব।’

আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও চায় নির্বাচন হোক। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী ছাত্রদল অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই তুলছে ক্যাম্পাসে ‘সহাবস্থানের’ দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যেকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। জবির বর্তমান ক্যাম্পাসে অবকাঠামোর অনেক সংকট। বাস্তবতার নিরিখেই এই সময়ে জবির ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি অযৌক্তিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজন করলে শাখা ছাত্রলীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী ছাত্র সংগঠন শিবিরের অংশগ্রহণ মানা হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান না থাকলে নির্বাচন আয়োজন অনর্থক।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দাম্পত্য কলহের জেরে যমজ ২ শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন মা
ইউআইইউ এলাকায় র‍্যাবের অভিযান, বিদেশি পিস্তলসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল গ্রেপ্তার
ভোটের মার্কা থাকছে না শাপলা, ইসির নীতিগত সিদ্ধান্ত
ফের এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা