একই সঙ্গে দুই কলেজের বেতন নিচ্ছেন শিক্ষকরা!

খায়রুল বাসিত, পাবনা
 | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫০

পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অনার্স শাখার বেশ কয়েকজন শিক্ষক একই সঙ্গে অন্য কলেজে চাকরি করেন, সেখানে এমপিওভুক্তও তারা।

অথচ ২০১২ সাল থেকে বেতন নিচ্ছেন কলেজটি থেকে। একই শিক্ষকের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়ার ঘটনাটি ঘটছে অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের যোগসাজশে।

শুধু এই অনিয়মই নয়, ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরও কিছু খাতে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি কলেজের মার্কেটের পাঁচ বছরের চুক্তি ও ভাড়া নবায়ন ও হালনাগাদ না করেই অধ্যক্ষ নিজের মতো করে ভাড়া তুলছেন।

কলেজ থেকে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ পরীক্ষার নামেও অধ্যক্ষ প্রতিটি বিষয়ে ৫০ টাকা করে আদায় করেছেন। কলেজের বাগান পরিষ্কারের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি অধ্যক্ষ এসব খাতে খরচের ১০০টি ভাউচার অনুমোদন করাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমারের কাছে দিলে তিনি তদন্ত করে এসব অসঙ্গতি পান। ভাউচারগুলো অনুমোদন না দিয়ে সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠিয়ে ইউএনও বলেন, অধ্যক্ষ বেশ কিছু ইস্যু তৈরি করেছেন নিজের দোষ ঢাকতে।

তবে অধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ইউএনও প্রায় ছয় মাসে কোনো অর্থই বরাদ্দ দেননি। সেখানে তিনি অসঙ্গতি পেলেন কোথায়?

গত ১৭ জানুয়ারি ইউএনও সরকার অসীম কুমার ভাউচারগুলোর আর্থিক অসঙ্গতি সংশোধন করে তা পাঠানোর কথা বলে চিঠি (স্মারক নং ০৫-৪৩.৭৬২২.০০০.৩৯.০০৩.১৯-১১৩) পাঠান অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের কাছে। ইউএনও কার্যালয়ের প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েক দিন চিঠিটি নিয়ে কলেজে গেলেও অধ্যক্ষ তা গ্রহণ করেননি।

পরে ইউএনও ডাকযোগে সেই চিঠিটি পাঠিয়ে দেন। অধ্যক্ষ চিঠি পাওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি পাল্টা চিঠিতে (স্মারক নং চাসক/০৬/২০১৯) তার (অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধে ইউএনও ব্যক্তিগত আক্রোশে ও কলেজের বিরুদ্ধে বহিরাগত একটি চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকা- ও চিঠি পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। অধ্যক্ষ তার চিঠিতে ১২ দফা ফিরিস্তি উল্লেখ করে বলেছেন, ইউএনও অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চাটমোহর সরকারি কলেজের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।

অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইউএনওকে সরকার যেদিন থেকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেদিন থেকে তিনি একটি টাকাও কলেজকে দেননি। যেমন জাতীয় শোক দিবস, ঈদে মিলাদুন্নবী ও মহান বিজয় দিবস পালনসহ অন্য কোনো এবং অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিল বাবদ কোনো টাকা দেননি। সেখানে ভাউচার অসঙ্গতি কীভাবে হলো? এখানে অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত একটি ভাউচারও নেই।’

শিক্ষকদের অন্য কলেজে চাকরির বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সেটা তো আমি জানি না। কেউ যদি অন্য কলেজে ক্লাস নেন, তাহলে তো সম্মানী পান। তিনি বেতন নেন না, সরকারি টাকাও না। ইউএনও তার দায়িত্বকালে প্রায় ছয় মাস একজন শিক্ষককেও বেতন দেননি। তিনি হয়তো কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এটা করছেন।’ ইউএনও সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘প্রশংসাপত্র বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে নিয়েছেন, সেগুলোর ডকুমেন্ট আছে। অনার্সের শিক্ষকদের বেতন বিল দিয়েছেন, আমি বলেছি, বেতন দিব। যাদের সঠিকভাবে নিয়োগ আছে, তারা পাবেন। অনেকে অন্য কলেজে চাকরি করেন, অথচ ২০১২ সাল থেকে এখান থেকেও বেতন নিচ্ছেন। একজন কীভাবে দুই জায়গা থেকে বেতন নেন?, এটা আর্থিক অসঙ্গতি। মার্কেটের ভাড়া বা চুক্তি হালনাগাদ না করে অধ্যক্ষ তার মতো করে ভাড়া উঠাচ্ছেন। বিষয়টি আমি সংসদ সদস্যকেও জানিয়েছি।’

‘টাকা প্রতিষ্ঠানের, ব্যক্তিগত কারও পকেটে যেন এই টাকা না যায়, তা দেখা হবে। সঠিক হলে বিল দেব। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে নেই।’

অসীম কুমার আরও বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ প্রায় তিন লাখ টাকার বিল-ভাউচার দিয়েছেন। আগে কলেজের পাশবই, ক্যাশবই ঠিক ছিল না, পরে আমি এক মাসের মধ্যে ঠিক করার কথা বলেছি। যে খাতের টাকা সেই খাতে ব্যয় করতে হবে। তারপরও দেখা যায়, পরীক্ষা খাতের টাকা খরচ করেছেন, সেই টাকা বিবিধ খাতেও খরচ দেখিয়েছেন। আবার অনেক বানানো ভাউচার, যার কোনো হদিস নেই। কলেজের বাগান পরিষ্কারের নামে অনেক টাকার বিল করা হয়েছে। সেগুলোর সত্যতা মেলেনি। এভাবে অর্ধেকের বেশি ভাউচারে অসঙ্গতি রয়েছে। অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে, কোথায় কীভাবে খরচ করেছেন, তা জানান। তিনি জানাননি।’

ইউএনও বলেন, ‘সরকার যেহেতু আমাকে আর্থিক বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছে, আর্থিক বিষয়ে স্বাক্ষর করতে হলে আমাকে দেখে করতে হবে। যা দিবেন, তাতে চোখ বন্ধ করে করতে পারি না। আমার চিঠি নিয়ে প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েক দিন গেছেন, তিনি চিঠি নেননি। পরে সরকারি নিয়ম অনুসারে ডাকযোগে দিয়েছি।’

‘আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে জানানোর কথা বলা হয়েছে। সঠিক থাকলে বিল পেয়ে যাবেন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আল্টিমেটাম

ইবি বিজনেস ক্লাবের যাত্রা শুরু; সভাপতি নাজিম, সম্পাদক রাফায়েল

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলেন পাবনার দুলাল

স্বাধীন ফিলিস্তিন আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে সমাবেশ

বেরোবি ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

প্রাথমিকে মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক রুটিনে পাঠদান

বুধবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা 

ইবি এবং তুরস্কের ইগদির বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক

‘কর্মনিষ্ঠ ও ত্যাগী পেশাজীবীকে প্রতিষ্ঠান সবসময় মনে রাখবে’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :